ছেলেটার নাম দুখু মিয়া। চায়ের দোকানে কাজ করতে হয়েছিল তাকে। শৈশব কাটে তার চায়ের দোকানে এঁটো কাপ পরিষ্কার করে। যৌবন এসে ঠেকে যুদ্ধক্ষেত্রে। এর মাঝে পেট চালাতে করতে হয়েছে মাজার-শরীফের খাদেমগিরি, মসজিদের ইমামতি এবং গ্রাম মোল্লাগিরি। আবার তিনি লেটো গানের দলেও যোগদান করেছিলেন। দরিদ্রতার ছোবলে বেড়ে ওঠা দুখু ছেলেটিই আমাদের জাতীয় কবি। আমাদের কাজী নজরুল ইসলাম।আজ তার ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম। পিতা কাজী ফকির আহমদ ও মা জায়েদা খাতুনের ষষ্ঠ পুত্র তিনি।‘বল বীর-বল উন্নত মম শিরশির নেহারি’ আমারি নত শিরওই শিখর হিমাদ্রির!এই অগ্নিঝরা বিদ্রোহী কবিতা ১৯২১ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে রচনা করেন তিনি। এছাড়াও ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে নতুন এক ধারার জন্ম দেন তিনি। এছাড়াও ইসলামী সংগীত (গজল) লিখে জয় করেন কোটি বাঙালির মন। নজরুল প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেছেন। দিয়েছেন সুর। সেগুলো ‘নজরুল গীতি’ নামে পরিচিত ও জনপ্রিয়। আবার ছোটদের জন্য লিখেছেন মজার মজার কবিতা ও ছড়া। এসব নানামুখী সৃজনশীল কাজ তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়।বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৪২ সালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হারিয়ে ফেলেন বাকশক্তি। শেষের দিকে তিনি হারিয়ে ফেলেন মানসিক ভারসাম্যও। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি তাকে দেয়া হয় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ সালের ২৯শে আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।তার ঝুলিতে রয়েছে অনেক সম্মাননা। এর মধ্যে অন্যতম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগত্তারিণী’ স্বর্ণপদক, পদ্মভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাহিত্যিক পুরস্কার ২১শে পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা।কবি তার একটি কবিতায় বলেছিলেন‘মসজিদেরই পাশে আমায়কবর দিয়ো ভাই,যেন গোরে থেকেও মুয়াজ্জিনেরআজান শুনতে পাই’এই কবিতায় তার অন্তিম ইচ্ছা প্রকাশ পায়। তার এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে কবিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করা হয়।