১৫ই আগস্ট : বাঙালি জাতির জন্য বড় বেদনার দিন

দৈনিক আজাদী প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২০, ০৪:৪৩

.tdi_2_173.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_2_173.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি- বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে শেখ মুজিবুর রহমান একটি অনিবার্য নাম। রাজনীতির বিশাল প্রান্তর অতিক্রম করে তিনি পর্যায়ক্রমে পরিণত হয়েছিলেন মহীরুহ সমান ব্যক্তিত্বে এবং ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু এবং জাতির জনকে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের কালো রাত্রিতে জাতির কতিপয় কুলাঙ্গার সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালি জাতিকে যে পাপের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করে গেছে তার জন্য হাজার বছর ধরে এ জাতিকে মাশুল গুণতে হবে। কলংক আর নির্মমতার জন্য কুখ্যাত এ দিনটির নাম ১৫ আগস্ট। ১৫ আগস্ট পরবর্তী সরকার সমূহ এ দিনটির শোকাবহ স্মৃতিকে ম্লান করে এবং ইতিহাস হতে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার হীন ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার সমূহ একদিকে ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সহযোগী এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সম্মিলিত রূপ ফলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এবং স্বাধীনতার বিপক্ষে তাদের অবস্থান হবে এটাই স্বাভাবিক। একদিন অন্ধকার ভেদ করে সূর্যের কিরণ রশ্মি বাঙালি জাতিকে উদ্ভাসিত করে দিল। দীর্ঘ সংগ্রামের পর সরকার গঠন করলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের গণমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী পরিষদের ১৯৯৬ সালের ৫ আগস্ট এক সভায় ১৫ আগস্টকে সরকারিভাবে জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং পরবর্তীতে একই বছরের ৮ আগস্ট এ বিষয়ে এক নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়। জারিকৃত আদেশে পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ফ্ল্যাগ রুলস্‌ সংশোধন করে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার বিষয়ের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর যথারীতি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও সরকারি ছুটি পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু ঘটনা পরিক্রমায় আবার ক্ষমতায় আসে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার, আলবদর, সমর্থিত বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত জোট সরকার। জামায়াত সমর্থিত এ সরকার ২০০২ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটির সিদ্ধান্ত বাতিল করে। এ সিদ্ধান্ত ছিল জোট সরকারের স্বাধীনতার বিপক্ষে তাদের অবস্থান নেয়ার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। এতে জোট সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্র জনগণের নিকট উন্মোচিত হয়ে যায়। জোট সরকারের এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৩ সালের ৩ আগস্ট একটি রীট করা হয়। এ রীটের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ সময় ধরে বিচার বিশ্লেষণ করে ২৭ জুলাই রবিবার মহামান্য বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল ইসলাম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। ঐতিহাসিক এ রায়ে ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটি বহাল, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার আদেশ দেন এবং জোট সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। হাইকোর্টের ঐতিহাসিক এ রায়ে বঙ্গবন্ধুর রক্ত ঋণ শোধের পথ আবারো সুগম হলো। আমাদের জানামতে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে যতগুলো জঘন্যতম ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের ৭৫ এর ১৫ আগস্টের সংঘটিত সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ড তার মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর সমস্ত অপরাধকে ছাড়িয়ে গেছে এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। অভ্যুত্থান বা ক্ষমতা দখলের ঘটনা বর্তমান আধুনিক বিশ্বে নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা কিন্তু এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনা ইতিহাসে নজিরবিহীন। সবচেয়ে দুঃখজনক যে, এ ধরনের জঘন্য অপরাধীদের রক্ষার জন্য আবার আইনও প্রণয়ন করা হয়েছিল। যা বিশ্ববিবেককে শঙ্কিত করে তোলে। এ ধরনের আইন যারা করেছিল এবং যারা এতে সমর্থন যুগিয়েছিল তারা সকলেই জঘন্য অপরাধ করেছে। এরা জাতির কলঙ্ক। এমন কলঙ্কবোধ পৃথিবীর ইতিহাস হতে কখনো মুছে ফেলা যাবে না। বাঙালি জাতির স্বপ্নের পুরুষ মহানায়ক বঙ্গবন্ধু একজন অসাধারণ মাটির মানুষ। বাংলার মাটির সাথে তাঁর হৃদয়ের যোগ অতি ঘনিষ্ঠতর ছিল বলেই হয়তো তাঁর প্রকৃতি নম্র স্বভাবের হয়ে গড়ে উঠেছিল। বাল্যকাল হতে শুরু করে ছাত্রাবস্থায় এবং যৌবনের প্রতিটি অধ্যায় এসব হাজারো কাহিনীতে ভরপুর। সবকিছুর ঊর্ধ্বেও শেখ মুজিবকে আজ যে ব্যক্তিত্বের জন্য বিশ্বের দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে, তা হল একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি। লাঞ্চিত মানবতার মুক্তির জন্য তাঁর সংগ্রামী ও বিপ্লবী ভূমিকা এমন বিশ্বজোড়া খ্যাতি পৃথিবীর ক’জন রাজনীতিবিদের জীবনে অর্জিত হয়েছে? ষাটের দশকের শেষ দিকে লন্ডনের ঐতিহ্যবাহী গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন, বাংলার মুকুটহীন সম্রাট। যুদ্ধ সঙ্কটে জর্জরিত ব্রিটেনবাসীর কাছে উইন্সটন চার্চিল, নায়কহীন ফরাসীদের কাছে দ্য গলে, ইন্দোনেশিয়ার কাছে সূকর্ণ যা ছিলেন- দুর্ভাগা বাংলার শোষিত বঞ্চিত নিপীড়িত জনগণের কাছে শেখ মুজিব ঠিক তাই। বাংলাদেশের পটভূমিকায় শেখ মুজিবুর রহমান একটি ব্যক্তি নন, একটি নামও নন, তিনি বাংলাদেশের মানুষের সমষ্টি। তিনি এদেশের মুক্তির উজ্জ্বল প্রতীক। একটি জীবন্ত আদর্শ। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষায় বলেন, “এদেশের মানুষ আমার জীবনের জন্য অজস্র রক্তপাত করেছে। আমি তাদের স্বার্থের প্রশ্নে বেঈমানী করতে পারিনা। দরকার পড়লে আমি আমার দেশের মানুষের রক্তের ঋণ নিজের রক্ত দিয়ে পরিশোধ করব”। বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের মধ্যে ছিল পুরুষ সিংহের বিক্রম তেজী ও সাহস আর নিঃস্বার্থ জনসেবার ঐকান্তিকতা। তাঁর সমগ্র সত্তাটি ছিল আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। তাঁর ভেতর ছিল অসাধারণ আত্মবিশ্বাস আর সুবিপুল গাম্ভীর্য। তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অসহনীয় দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যেও প্রাণপ্রাচুর্য্য লক্ষণীয়। তাঁর একনিষ্ঠ দেশপ্রেম ও স্বার্থলেশহীন, কর্মপ্রচেষ্টার প্রতি লক্ষ্য রেখে বিখ্যাত লন্ডন টাইমস্‌ পত্রিকা মন্তব্য করেছিল “শেখ মুজিবের মতো সু-পুরুষ বোধ হয় ওর দেশে দুটি নেই”। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পুরোপুরি একজন বাঙালি, মনে প্রাণে একজন খাঁটি বাঙালি। বাংলার মাটিকে বাংলার আকাশ-বাতাস, মাঠ-প্রান্তরকে এবং বাংলার মানুষকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ন্যায় এমন নিবিড় করে বোধ করি আর কোন বাঙালি ভালবাসতে পারেননি। বাংলাদেশকে ভালবেসে, বাংলার নির্যাতিত শোষিত, লাঞ্চিত মানুষকে ভালবেসে জীবনে শেখ মুজিবের ন্যায় দুঃখ নির্যাতন আর কোন বাঙালি সহ্য করেননি। বাংলার মাটির প্রবাহ শেখ মুজিবের রক্তে তরঙ্গ সৃষ্টি করেছে। বাংলার নিঃশ্বাস যেন শেখ মুজিবের নিজের শরীরের নিঃশ্বাসে পরিণত হয়েছে। বাংলার সমগ্র অস্তিত্বের সাথে তিনি যেন একাত্ম হয়ে পড়েছেন। বাংলার শরীরে যখন যে ব্যথা বেজেছে সে ব্যথা যেন শেখ মুজিবের শরীরেও ঝংকার তুলেছে। বাংলার মাটিতে যুগে যুগে মানুষ জন্মেছে। চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি বলে যে বাঁশি বাজালেন, সেই বিশ্বকবি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ন্যায় বাংলার প্রাণের সাথে একাত্মতা এমন গভীরভাবে আর কেউ অনুভব করেননি। পরবর্তীকালে শুধু বাক্যে নয়। শুধু অনুভূতি দিয়েও নয়। দেহের বিন্দু বিন্দু রক্ত দিয়ে, জীবনের সকল আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে। সকল শক্তি দিয়ে ও সাধনা দিয়ে যিনি বাংলার সাথে একাত্মতা প্রমাণ করেছেন, তিনিই বাঙালির নয়নমনি শেখ মুজিব। বাংলার অস্তিত্ব হতে তাঁর ব্যক্তিত্বকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না এবং বিচ্ছিন্ন করা সম্ভবও নয়। স্বাধীন বাংলার স্থপতি মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। একজন মহৎপ্রাণ মানুষ, অসীম সাহসের অধিকারী একজন হৃদয়বান জননায়ক। গোটা বাঙালি জাতির এ সমর্থন তিনি অর্জন করেছিলেন তাঁর নিখাদ দেশপ্রেম ও জনগণের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা দিয়ে। তাঁর মন ছিল সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তাই স্বাধীনতার পরও দেখা যায় তিনি ধ্বংসস্ত্থপের মধ্যে দাঁড়িয়ে শুরু করেছিলেন সবকিছু। বঙ্গবন্ধুহীন বাংলার ঘরে ঘরে আজ অনুতাপ আর রক্তের ঋণ শোধ করার আকুল ইচ্ছা ও দীর্ঘশ্বাস। যেমন অনুতাপ বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌল্লার জন্য, অনুতাপ করেছিল রোমনরা সিজারের জন্য, গ্রীসে সক্রেটিসের জন্য, জায়েরে আজো লুমুম্বা হত্যার অভিশাপে জর্জরিত। গ্রানাডার মাটি হজম করেনি মরিস বিশপের রক্ত। চিলির মাটি সহ্য করেনি আলেন্দের রক্ত। তদ্রুপ বাংলার মাটি হজম করবে না- করতে পারেনা তাঁদের অতি আপন ও প্রিয় মুজিবরের রক্ত। লেখক : সম্পাদক, শিল্পশৈলী.tdi_3_f1f.td-a-rec-img{text-align:left}.tdi_3_f1f.td-a-rec-img img{margin:0 auto 0 0} (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us