বেড়েছে দেনা কমেছে বাজেট

মানবজমিন প্রকাশিত: ০৬ আগস্ট ২০২০, ০০:০০

চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়াদের শেষ বাজেট ঘোষণা করেন মঙ্গলবার। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২,৪৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। যা গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ৪৯ কোটি ৬১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা কম। আর ঘোষিত বাজেটে দেনা দেখানো হয়েছে ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এরমধ্যে সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমের কাছ থেকে পাওয়া দেনার পরিমাণ ২৯৫ কোটি ২৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৪ টাকা। সে হিসেবে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের আমলে দেনা বেড়েছে আরও প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এ জন্য চসিকের রাজস্ব আদায় কম, সক্ষমতা যাচাই না করে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া এবং প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, করপোরেশনের আয় বাড়াতে পৌরকর পুনর্মূল্যায়ন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য এটা করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছি। তাতে শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদি সে চেষ্টায় সফল হতাম, তাহলে বর্তমানে যে রাজস্ব আদায় হচ্ছে, তা এতদিনে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে যেত। প্রত্যাশিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করাও সহজ হত। আর্থিক সক্ষমতার ঘাটতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রায় ২০ শতাংশ বৈশাখি ভাতা এবং নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। কার্যকর করতে গিয়ে প্রশাসনের ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এটা আমার ওপর চাপ তৈরি করেছে। ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২,৪৮৫ কোটি ৯১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা বাজেটের ৫৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে হয়েছে মাত্র। এতে এবার বাজেটের পরিমাণও কমেছে। মেয়র বলেন, দেনা মাথায় নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২,৪৩৬ কোটি ৩০ লাখ ৪২ হাজার টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন অনুদান খাতে সর্বোচ্চ ১,৬২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার আয় দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে দেখানো হয়েছে বকেয়া কর ও অভিকর খাতে ১৯৯ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। হালকর ও অভিকর খাতে আয় দেখানো হয়েছে ১৪৯ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার টাকা। এছাড়া ফিস আদায় বাবদ ১২২ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার, জরিমানা আদায় বাবদ ৫০ লাখ, সমপদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় বাবদ ৯৮ কোটি ৯০ লাখ, ব্যাংক স্থিতি থেকে আয় বাবদ ৫ কোটি ও ভর্তুকিসহ নিজস্ব উৎস থেকে আয় বাবদ ৫৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে উন্নয়ন খাতে ৯৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, বকেয়া দেনা বাবদ ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে চসিক। তবে চসিকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পারিশ্রমিক প্রদান বাবদ ব্যয় হবে বছরে ২৯০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এছাড়া মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ৫৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ভাড়া কর অভিকর বাবদ ৬ কোটি ৯৫ লাখ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও পানি ব্যয় বাবদ ৪৬ কোটি ৫০ লাখ, কল্যাণমূলক ব্যয় ৩৮ কোটি ৯৫ লাখ, ডাক তার দূরালাপনী বাবদ ১ কোটি ৭১ লাখ, আতিথেয়তা ও উৎসব বাবদ ৬ কোটি ৫ লাখ, বিমা বাবদ ৫৫ লাখ, ভ্রমণ ও যাতায়াত ব্যয় বাবদ ১ কোটি ৭৫ লাখ, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা ব্যয় বাবদ ৫ কোটি ৮৫ লাখসহ মুদ্রণ, মনিহারী, ফিসবৃত্তি ও পেশাগত ব্যয়, প্রশিক্ষণ, ভান্ডার ও বিবিধ খাতের ব্যয় মিলিয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। শুধুমাত্র বেতন, ভাতা, পারিশ্রমিকসহ চসিকের বার্ষিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় হবে ৫৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের প্রায় ২২.৮৭ শতাংশ। পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া বাকি ১৮৭৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা উন্নয়ন, বকেয়া দেনা, ত্রাণ ক্রয় ও অন্যান্য খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে। সূত্র জানায়, চসিকের সবচেয়ে বেশি দেনা বকেয়া আছে ঠিকাদারদের বিল বাবদ ৩৯০ কোটি টাকা। থোক বরাদ্দ ১২৫ কোটি টাকা। সাধারণ তহবিলে ১৬৮ কোটি টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ভবিষ্য তহবিলে টাকা জমা দিতে না পারা দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। আর যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারি এরই মধ্যে অবসরে গেছেন, তাদের আনুতোষিকও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারেনি চসিক। এ খাতে বকেয়ার পরিমাণ ৪৫ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে ২৫ কোটি টাকা। দুই দশক আগে নেওয়া দুটি প্রকল্পে চসিককে দেওয়া সরকারের ঋণ বাবদ বকেয়া আছে ২০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট তহবিলে ৩০ লাখ এবং ঠিকাদারদের স্থায়ী জামানত তহবিল থেকে চসিকের খরচ বাবদ দেনা জমেছে ২০ লাখ টাকা। এছাড়া বিবিধ দেনার পরিমাণ ২ কোটি টাকা। এ বিষয়ে চসিকের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন বলেন, অনুমোদিত বকেয়া দেনার শতভাগ পরিমাণ হচ্ছে ৭৯০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। তবে এখনও হিসাব পাওয়া যায়নি এমন দেনাও আছে। সব মিলিয়ে ৮০০ কোটি টাকার মতো হতে পারে। তবে পুরো দেনাই যে গত পাঁচবছরে জমেছে তা নয়। আগের আমলের দেনাও রয়েছে।মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে সামর্থ্যের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে নগরবাসীর সেবা করার চেষ্টা করেছি। আইনের মধ্যে থেকে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। অগোচরে কোনো ভুলত্রুটি থাকলে, কোনো ব্যর্থতা থাকলে সেটার দায় আমি নিজের কাঁধে নিলাম। সফলতার সবটুকু নগরবাসীকে দিলাম। চসিকের প্রশাসক পদে খোরশেদ আলম সুজনের দায়িত্ব পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি (সুজন) আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী। উনার মূল্যায়ন হয়েছে। আমি খুবই খুশি। উনাকে আমি শতভাগ সহযোগিতা করব।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us