‘কলঙ্কিনী রাধা’ গানে ক্ষেপেছেন ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, নেটফ্লিক্স বয়কটের ডাক

পূর্ব পশ্চিম প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২০, ০২:১৩

বলিউড তারকা আনুশকা শর্মার প্রযোজনায় সম্প্রতি অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্সে মুক্তি দেওয়া ‘বুলবুল’ সিনেমার একটি জনপ্রিয় বাংলা লোকগীতির ব্যবহার নিয়ে ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা অনেকেই মারাত্মক ক্ষেপেছেন - যার জেরে নেটফ্লিক্স বয়কট করারও ডাক উঠছে, ছবিটির প্রযোজক আনুশকা শর্মাকেও ভীষণভাবে ট্রোলড হতে হচ্ছে। 'বুলবুল' নামে ওই মুভিতে যে প্রাচীন বাংলা গানটি নিয়ে এই বিতর্ক, সেটি হল ‘কলঙ্কিনী রাধা’ - বাংলাদেশে সিলেটের কিংবদন্তী বাউল শিল্পী শাহ আবদুল করিম যে গানটিকে অসম্ভব জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।খবর বিবিসি বাংলার।

ওই গানে হিন্দুদের ভগবান কৃষ্ণকে যেভাবে ‘কানু হারামজাদা’ এবং তাঁর লীলাসঙ্গিনী রাধাকে ‘কলঙ্কিনী’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, সেটাকে বিশেষত উত্তর ভারতে অনেকেই হিন্দুত্বের ওপর আক্রমণ হিসেবেই দেখছেন। এই আক্রমণ ও সমালোচনার মুখে নেটফ্লিক্স ওই মুভির হিন্দি সাবটাইটেলেও কৃষ্ণের বর্ণনায় ‘হারামজাদা’ শব্দটি পাল্টে ‘নটখট’ (দুষ্টু) শব্দটি ব্যবহার করেছে - তবে আনুশকা শর্মা নিজে বা মুভির নির্মাতা সংস্থা এই বিতর্ক নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি। নেটফ্লিক্সের প্ল্যাটফর্মে বুলবুল রিলিজ করেছিল গত ২৪ জুন, আর তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ‘কলঙ্কিনী রাধা’ নিয়ে শুরু হয়ে যায় তুমুল হইচই আর তর্কবিতর্ক।

ভারতের জনপ্রিয় ইউটিউবার ও বিগ বস - ১৩'র প্রতিযোগী হিন্দুস্তানি ভাউ টুইট করেন, বুলবুলে যেভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধাকে নোংরা ভাষায় অপমানিত করা হয়েছে, তার জন্য সরকার কি আনুষ্কা শর্মাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে? আদিত্য অখিল নামে আরও একজন টুইটার ব্যবহারকারী অভিযোগ তোলেন, বিনোদনের নামে চিরকালই বলিউড এভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজ ও তাদের দেবদেবীদের অপমান করে আসছে। প্রথমেশ ভাই নামে আরও একজন লেখেন, প্রথমে পাতাললোক ও এখন বুলবুল - আনুশকা শর্মা এমন সব সিরিজ ও মুভিই প্রযোজনা করছেন যেগুলো হিন্দুদের ভাবাবেগকে আহত করে।

ভগবান কৃষ্ণকে অপমান করেছে, এই ধরনের মুভির বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গর্জে উঠতে হবে বলেও আহ্বান জানান তিনি, 'হ্যাশট্যাগ বয়কটবুলবুলে'র আওয়াজও সোশ্যাল মিডিয়াতে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পীযূষ রাই নামে আর একজন জনপ্রিয় ইউটিউবার আবার নিজের চ্যানেলে প্রশ্ন তোলেন, এই মুভিতে যেভাবে হিন্দু দেবীদের গালিগালাজ করা হয়েছে, সেটা কি বাংলায় খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা না কি? আমি ভুল করলে বাঙালিরা আমাকে শুধরে দেবেন! একই সঙ্গে নবী মহম্মদ বা খ্রিস্টানদের আরাধ্য যীশুকে এই ধরনের ভাষায় ডাকার ক্ষমতা ফিল্মের নির্মাতাদের আছে কি না, সে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দেন তিনি।

বলেন, "বুলবুলে যেটা করা হয়েছে তা হল সিলেক্টিভ সেকুলারিজম! বস্তুত ‘হারামজাদা’ ও ‘কলঙ্কিনী’ শব্দদুটির জন্য ইংরেজি ও হিন্দিতে বুলবুলে যে ধরনের সাবটাইটেল ব্যবহার করেছিল তা অনেকের কাছেই রীতিমতো আপত্তিকর ও ‘হিন্দুফোবিক’ ঠেকেছে। যেমন, ইংরেজি সাবটোইটেলে কলঙ্কিনীর জায়গায় ‘শেমলেস হাসি’ (লজ্জাহীনা নারী) ও হারামজাদার জায়গায় ‘বাস্টার্ড’ (বেজন্মা) লেখা হয়েছিল। হিন্দিতে ব্যবহার করা হয়েছিল যথাক্রমে বেশরম ও হারামজাদা শব্দ দুটো। পরে অবশ্য হারামজাদা পাল্টে লেখা হয়েছে নটখট শব্দটি। তবে কলকাতার লোকশিল্পীরা অবশ্য এই বিতর্ককে তেমন আমল দিচ্ছেন না, আর এটিকে হিন্দুত্বর বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে দেখারও কোনও প্রয়োজন নেই বলেই তাদের অভিমত।

গায়ক সাত্যকি ব্যানার্জি বলেন, এই প্রচলিত লোকগানটি বাউলরাই বেশি গেয়ে থাকেন, ফকিরদের মধ্যে এটি গাওয়ার প্রচলন কম। আর বাউলরা তো তাদের ঘরের লোক, প্রিয় রাধাকৃষ্ণকে আদর করে কত নামেই না ডাকেন। বাউলদের গানে কৃষ্ণকে ননীচোর, লম্পট কত কিছুই তো বলা হয়। ‘ননীচোরা কৃষ্ণ’, ‘লম্পট বনমালী’ গানে এমন অনেক কিছুই বলার রীতি আছে, সেই ভাবের জায়গা থেকেই জিনিসটা দেখলে ভাল হয়। ঘুমচিঠি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালান

প্রতীক ব্যানার্জি, তাঁর গবেষণা আবার বলছে বাউল শাহ আবদুল করিম বা তাঁর পূর্বসূরী রাধারমণ মিত্র - মূল গানটি তাদের কারওরই লেখা নয়। তিনি বলেন, যতদূর জানতে পারছি এই গানটির উৎস আসামের কামরূপ অঞ্চলে। পরে অবশ্য আবদুল করিমের মতো অনেক শিল্পীই গানটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন, কিন্তু এটির বাণী আসলে আরও অনেক পুরনো। এই গানে হারামজাদা বা কলঙ্কিনী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে বলেই যারা হিন্দুত্ব গেল গেল রব তুলছেন, তাদের উদ্দেশে বলব আপনারা আসলে বাঙালিয়ানা বা বাংলা লোকসংস্কৃতির কিছুই বোঝেন না! এটা অনেকটা চিলে কান নিয়ে গেল শুনেই কান ফিরিয়ে আনতে দৌড় লাগানোর মতো ব্যাপার।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us