পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার। প্রশ্ন: আমাদের সমাজে অপুত্রক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর সম্পত্তি থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করা হয়। কেউ জীবদ্দশায় মেয়েকে সম্পত্তি দিয়ে যেতে চাইলে কী করতে হবে? কোনো জমি হস্তান্তর বা বিক্রির জন্য দলিল কি দলিল লেখক দিয়ে লেখানো বাধ্যতামূলক? এমন দলিলে কেবল গৎবাঁধা কিছু বিষয় লেখা হয়। ব্যক্তি কেন তাঁর সম্পত্তি সন্তানকে কিংবা অন্য কাউকে দান করে যেতে চান, দলিলে সে বিষয় উল্লেখ করার সুযোগ আছে কি? ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর অনেক আলোচনা–সমালোচনা হয়। এ ধরনের বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকলে হয়তো অন্যায় সমালোচনা অনেকাংশে কমবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, লক্ষ্মীপুর উত্তর: পুত্রসন্তান না থাকলে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হিসেবে তাঁর ভাইয়েরা সম্পত্তির একটি অংশ পাবে। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি তাঁর সব সম্পত্তি মেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিতে চান, তাহলে তা হেবা দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে জীবিত অবস্থায় মেয়েদের নামে হস্তান্তর করে দিতে হবে।
দান করে দিলেও ওই সম্পত্তি সঙ্গে সঙ্গে হস্তান্তর করতে হবে। হেবার ক্ষেত্রে শুধু রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়ের মধ্যে হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এই নামমাত্র ১০০ (এক শ) টাকা ফিতে রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পাওয়া যাবে। অবশ্যই দলিল একজন পেশাদার মানুষের মাধ্যমে লেখাতে হবে। পেশাদার ছাড়া এ ধরনের কাজ করার কোনো ধরনের কোনো সুযোগ নেই। দলিলে গৎবাঁধা বিষয় লেখা থাকে এটি একটি ভুল ধারণা। প্রতিটি ভিন্ন বিষয়ের জন্য ভিন্নভাবে দলিল লিখতে হবে। দানকে মুসলিম আইনে হেবা বলা হয়ে থাকে।
কারও কাছ থেকে প্রতিদান বা বিনিময় ছাড়া কোনো কিছু নিঃশর্তে গ্রহণ করাকে দান বলা হয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন ১৮৮২ (টিপিঅ্যাক্ট)–এর ১২২ ধারা অনুসারে সম্পত্তিদাতা কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করলে এবং গ্রহীতা বা গ্রহীতার পক্ষে কোনো ব্যক্তি ওই সম্পত্তি গ্রহণ করলে তাকে দান বলা হয়। দান বা হেবা বৈধ হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়— ১. দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণা প্রদান। ২. গ্রহীতার পক্ষ থেকে দান গ্রহণ বা স্বীকার করা। ৩. দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দান করা সম্পত্তির দখল প্রদান। হেবা করার পদ্ধতি শুধু মুসলমানদের জন্য প্রযোজ্য। তবে দান যেকোনো ধর্মের মানুষই করতে পারেন। তবে দানের ক্ষেত্রেও দাতা ও গ্রহীতার সম্পূর্ণ সম্মতি থাকতে হয়। প্রতিটি হেবাদান দলিলের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে। ২০০৫ সালে আগস্ট মাস থেকে হেবা করা সম্পত্তির দলিল রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।