সুনীল গাভাস্কার জানতেনই না! তাঁর কী অপরাধ, কী খামতি! আজ থেকে ৪২ বছর আগে অধিনায়ক হিসেবে এক টেস্ট সিরিজে দারুণ এক জয় পেয়েও নেতৃত্ব হারিয়েছিলেন তিনি। এত বছর পর সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি। ১৯৭৮-৭৯ সালে সে সময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ক্রিকেট শক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ টেস্টের সিরিজ জিতেছিল ভারত।
সে সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে তো বটেই, খেলোয়াড় গাভাস্কারও ছিলেন দুর্দান্ত। গোটা সিরিজে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৩২ রান। কিন্তু তারপরেও সিরিজের পরপরই তাঁকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্রীনিবাস ভেঙ্কটারাঘবনকে। ‘লিটল মাস্টার’ এখনো জানেন না, তাঁর কী সমস্যা দেখেছিলেন নির্বাচকেরা। করোনার এই সময় মাঠে খেলা না থাকার কারণে সাবেক খেলোয়াড়-ভাষ্যকারদের অনেকে স্মৃতিচারণে মেতেছেন। গাভাস্কার বললেন, ৪২ বছর আগে তাঁর অধিনায়কত্ব হারানোর গল্পটা।
অধিনায়কত্ব হারানোর সেই স্মৃতিটা আজও নাড়া দেয় গাভাস্কারকে, ‘১৯৭৮-৭৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ভারত ৬ টেস্টের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। আমি সে সিরিজে ব্যাট হাতে ৭০০’র ওপর রান করি। কিন্তু আমাকে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। আমি কারণটা আজও জানি না।’ নিজের মনে অবশ্য একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন গাভাস্কার, ‘একটা কারণ হতে পারে, আমি সে সময় ক্যারি প্যাকার সিরিজে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট খোলা মনের ছিলাম। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় সেই সিরিজে নির্বাচিত হওয়ার আগেই আমি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিতে সই করেছিলাম। সত্তরের দশকের শেষদিকে অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ও মিডিয়া টাইকুন ক্যারি প্যাকার ক্রিকেটে বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন এনেছিলেন।
সাদা বল, রঙিন পোশাক আর ফ্লাডলাইটের আলোতে খেলা তাঁরই আবিষ্কার। বিশ্ব ক্রিকেটের অধিকর্তারা অবশ্য ক্যারি প্যাকারের সেই উদ্যোগ সমর্থন করেননি। সেই সিরিজে যোগ দেওয়া ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাই যার যার দেশের ক্রিকেট বোর্ডও ভালো আচরণ করেনি। প্যাকারের সিরিজে যোগ দেওয়া ক্রিকেটারদের নিষিদ্ধও করা হয়েছিল। গাভাস্কার অবশ্য এর পরেও ভারতের অধিনায়কত্বে ফিরেছিলেন। ১৯৭৯ সালেই তাঁকে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে আবারও অধিনায়ক করা হয়। পরের গল্প আরও রোমাঞ্চকর।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যেতে না চাওয়ায় অধিনায়কত্ব হারান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত সেবার খেলেছিল ৬ টেস্টের সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম দুই টেস্ট ড্র হয়েছিল। তৃতীয় টেস্টে ভারত জয় পায়। সেই টেস্টে গাভাস্কার করেন ৭৬। দিল্লির চতুর্থ টেস্টে গাভাস্কারের ব্যাট থেকে আসে সেঞ্চুরি (১১৫)। সেই টেস্টে ২১২ রানে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকেও ভারত জিততে পারেনি, টেস্টটি ড্র হয়। পঞ্চম টেস্ট ড্র হওয়ার পর ষষ্ঠ টেস্টে ভারত ইনিংস ব্যবধানে জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে।