পাশ্চাত্যের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণেই চাকরি হারাচ্ছে গার্মেন্টস কর্মীরা?

বাংলা ট্রিবিউন প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২০, ১২:৫২

ইংল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডজুড়ে আবারও খুলতে শুরু করেছে ফ্যাশন আউটলেটগুলো। তবে যাদের সস্তা শ্রমে ওই পোশাকগুলো তৈরি, গণহারে তারা চাকরি হারাচ্ছে। মুখোমুখি হচ্ছে খাদ্যাভাবের। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) বলছে, কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হওয়ায় শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন গার্মেন্টস মালিকেরা। শ্রমিক অধিকারের সুরক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে পাশ্চাত্যের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে।

মার্চে করোনা মহামারির ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের সময় বিভিন্ন দেশ লকডাউনে চলে যায়। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো বিশ্বব্যাপী তাদের সরবরাহকারীদের কয়েক মিলিয়ন ডলারের পোশাকের অর্ডার বাতিল করে দেয়। বাতিলের তালিকায় ইতোমধ্যেই প্যাকেটজাত হয়ে শিপিং-এর জন্য অপেক্ষমান পোশাকও রয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এ বলছে, ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহকারীদের কাছে ইতোমধ্যেই তাদের দেওয়া প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের অর্ডার প্রত্যাহার করেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক জানিয়েছেন, গত মাসে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে। তার আশঙ্কা, বিদেশিদের অর্ডার না পেলে আগামী ছয় মাসে বেকার শ্রমিকের সংখ্যা পাঁচ লাখে পৌঁছাতে পারে।

রাজধানী ঢাকার ২৬ বছরের একজন পোশাক শ্রমিক নাজমিন নাহার। ধার করা চালের ওপর ভরসা করেই জীবনধারণ করতে হয় দুই সন্তানের মা নাজমিনকে। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে খাবার বা ভাড়া দেওয়ার মতো মজুরি তার হাতে নেই। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা সত্ত্বেও ম্যাগপাই নিটওয়্যারের সঙ্গে কাজ করে খুশি ছিল নাজমিন। সেখান থেকে তিনি মাসে ১৫০ পাউন্ড (১৫ হাজার ৭২৮ টাকা) উপার্জন করতেন। এই ম্যাগপাই নিটওয়্যার বার্টন এবং এইচএন্ডএম-এর মতো ব্রিটিশ ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরি করে।

মার্চের শেষদিকে বাংলাদেশ লকডাউনে যায় এবং কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। গত ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি ফের চালু হলেও নাজমিনকে না করে দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে নাজমিন বলেন, ‘তারা আমাদের বলেছে, বিদেশি ক্রেতারা সব অর্ডার বাতিল করে দিচ্ছে। ফলে কোনও নতুন কাজ নেই। দুই মাস ধরে আমাদের কোনও বেতন নেই।’

নাজমিন নাহার বলেন, ‘আমাদের বাসা ভাড়া বকেয়া পড়ে আছে। যাবতীয় মুদি সামগ্রী আমরা বাকিতে কিনে থাকি। এখন আগের টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত তারা আমাদের আর কোনও খাবার দেবে না। বাড়িওয়ালা আমাদের জন্য এক বস্তা চালের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন এবং তাতেই আমরা বেঁচে আছি।’

ম্যাগপাই নিটওয়্যারের অর্ডারকারী এইচঅ্যান্ডএম-এর দাবি, তারা ওই গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কোনও অর্ডার বাতিল করেনি। প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিককে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।’

মাতালানসহ অন্যান্য পশ্চিমা ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক সামগ্রী তৈরি করে আল্টিমেট ফ্যাশন লিমিটেড। ঢাকা থেকে এক ঘণ্টা দূরের এ প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় কাজ করতেন রোজিনা বেগম। ঘরে আট বছরের পুত্র সন্তানের সঙ্গে খেলছিলেন রোজিনা। তিনি জানান, করোনাভাইরাসের ধাক্কায় কারখানার আরও ৩০০ জন কর্মীসহ তিনি চাকরিচ্যুত হন। সেখানে তার মাসিক বেতন ছিল আট হাজার টাকা।

ট্রেড ইউনিয়ন রোজিনাকে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ তাদের বলেছে, বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার বাতিলের ফলে তাদের এই ছাঁটাইয়ে যেতে হয়েছে।

রোজিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের ভয় না থাকলে আমরা তীব্র প্রতিবাদ করতে পারতাম। তবে এ ভাইরাসের কারণে আমরা শ্রমিকদের জড়ো করে জোরালো প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। যখনই চার-পাঁচজন শ্রমিক কারখানার সামনে জড়ো হয়েছে, তখনই তারা আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। আপনি তো আর একাই জোরালো প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারবেন না।’

আঁখি আক্তার নামের আরেক শ্রমিক স্টার্লিং স্টাইলস নামের একটি কারখানায় ৯ হাজার ৩০০ টাকা মাসিক বেতনে কাজ করতেন। তিনি জানান, কোভিডের লক্ষণ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এখন অন্য কোনও চাকরি পাওয়াও তার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অথচ আগের প্রতিষ্ঠানে তার এখনও দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।

আঁখি আক্তার বলেন, ‘আমরা গ্রামেও ফিরে যেতে পারছি না। কারণ যেখানে আমাদের কিছুই নেই, সেখানে আমরা কী করবো? আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি। কাজই আমাদের উপার্জনের একমাত্র উৎস।’ তিনি বলেন, অর্ডার সংকুচিত হয়ে এসেছে। কারখানাগুলো শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে।

বাংলাদেশে যদিও কারখানাগুলো এখন ফের চালু হচ্ছে, তবে অর্ডারের পরিমাণ আগের চেয়ে প্রায় ৮০ ভাগ কম। ওয়ার্কার্স রাইটস কনসোর্টিয়াম কর্তৃক চালু করা একটি অনলাইন ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, আর্কাডিয়া, প্রাইমার্ক, এডিনবার্গ উলেন মিলসহ ব্রিটিশ খুচরা ব্র্যান্ডগুলো তাদের সব অর্ডারের জন্য বিদেশি সরবরাহকারীদের পুরো অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

আল্টিমেট ফ্যাশন-এর একজন মুখপাত্র বলেন, ‘কোভিড এবং সামাজিক দূরত্বের কারণে আমাদের ৭০ ভাগ শ্রমিক ও সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদন পরিকল্পনা করতে হয়েছিল। এজন্য সরকারি নিয়ম ও প্রবিধান মেনে আমাদের কিছু শ্রমিককে ছাড়তে হয়েছিল।’ আর্কাডিয়া, ম্যাগপাই নিটওয়্যার এবং স্টার্লিং স্টাইলস-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

Ron DeSantis ends election campaign, backs Trump

২ মাস, ১ সপ্তাহ আগে

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us