বাবা-মার কাছে তারা শুনেছেন দুঃস্থদের সাহায্য করার কথা। একই শিক্ষা পেয়েছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। কিন্তু কীভাবে তা করা যায়? মানুষের জন্য কিছু করার ভাবনা মনে ঘুরপাক করতে থাকে। রোজগারও নেই। তাই অনেক ভেবে টিফিন ও হাত খরচের টাকা কিছুটা করে বাঁচান একদল বন্ধু। বেশ কয়েক বছর ধরে জমানো সেই টাকা দিয়েই বিপদে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ান তারা। এভাবে জমানো টাকায় দুস্থদের নানাভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগর এলাকাল একদল তরুণ।
মানবকল্যাণের জন্য তারা ‘ইচ্ছা ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও গড়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে গৃহবন্দি, কর্মহীন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় ইচ্ছা ফাউন্ডেশন। নিজেদর সামর্থ অনুযাযী সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তারা। একটা সময়ে মানবিক এই উদ্যোগের সঙ্গে শামিল হন আরো অনেকে। অনেকের মতো সিঙ্গাপুর প্রবাসী ও ব্যবসায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলমও ইচ্ছা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হন।
এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশের মানুষ কষ্টে আছেন, এই ভাবনাটা তাকে পীড়া দেয়। ফলে দুর্দিনে চুপ করে আর থাকা হয় না তার। হাত বাড়ালেন সংকটে পড়া আপন মাটির মানুষের জন্য। প্রকৃত মানুষের হাতে সহায়তা পৌঁছানোর জন্য তিনি বিশ্বস্ত মনে করেন ইচ্ছে ফাউন্ডেশনের সদস্যদের। দূর দেশ থেকে পাঠানো প্রবাসী খোরশেদ আলমের টাকায় ১৫০ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয় ইচ্ছা ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের প্রতিটি সেচ্ছাসেবক বাজার করা, প্যাকেজিং করা, খুঁজে খুঁজে মুখ ফুটে বলতে না পারা অসহায় পরিবারের মাঝে টোকেন ডিস্ট্রিবিউশন করা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে নিরাপদ দূরুত্বে দাঁড় করিয়ে ঈদ উপহারের ব্যাগ বিতরণ করে। এভাবেই নিজেদের জমানো টাকা ও মানুষের সহায়তায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে তারা। মানবিক এই উদ্যোগের কথা জানতে পেরে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য উপস্থিত হন স্থানীয় শহিদুল আলম খান কাজল, আসাদুজ্জামান আসাদ, হাসানুজ্জামান হিটু, এরশাদ হোসেন সাদি, আবু সাঈদসহ আরো কয়েকজন।
এমন সেবামূলক কর্মকা- চালিয়ে যাওয়ার জন্য তারা তরুণদের সাধুবাদ জানান। তারা বলেন, ওরা যে মহৎ উদ্যোগ হাতে নিয়েছে, তা অনুকরণীয়। ওদের কর্মকা-ের খবর পেয়ে অভিভূত হয়েছি। ওদের দেখে অন্যরাও দুস্থদের পাশে গিয়ে দাঁড়াক। ইচ্ছা ফাউন্ডেশনের সেচ্ছাসেবীদের মধ্যে আছেন মো. নুরুল ইসলাম সোহেল, এনামুল হক, কাজী আহাদ হোসেন, কাজী সবুজ, মোহাম্মদ আজগর মিলন, আফজাল, ইমন, তানভীর, মামুন, তারেক, সাব্বির, টিপু, মৃদুল, বিপুল, রাতিন, রমজান, রাব্বি, রাসেল, রাহাত, শুভ, স্বাধীন, রানা, বজলু, সেলিম, শাহীন, আলাউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ।
ফাউন্ডেশনের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. নুরুল ইসলাম সোহেল বলেন, আমরা অনেকদিন যাবত বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজ করছি। ইচ্ছা ফাউন্ডেশনটি মূলত আমরা বন্ধুরা মিলে করেছি। বিভিন্ন সময় আমরা নিজেদের টিফিন বা হাত খরচের টাকা দিয়ে ছোট ছোট সামাজিক কাজগুলো করি। করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়েও অনেকে আমাদের কাছে সহযোগিতা চায়। যাদের একটি বড় অংশ নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মুখ ফুটে বলতে না পারা পরিবার। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে নিম্নমধ্যবিত্তরা এই দুর্যোগে খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে।