পিরামিডের কথা শুনলে প্রথমেই প্রাচীন মিশরের শাসকদের সমাধিস্তম্ভের কথা মনে পড়ে নিশ্চয়! মিশরের বিশাল আকৃতির পিরামিডগুলো মনুষ্য সৃষ্টি সমাধিস্তম্ভ। যা পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের একটি। তবে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া পিরামিডের অস্তিত্বও পৃথিবীতে রয়েছে। যেগুলো ‘আর্থ পিরামিড’ নামে পরিচিত। তবে এগুলো কোনো সমাধিস্তম্ভ নয়। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি মাটির স্তম্ভ। প্রকৃতির এই বিরল সৌন্দর্য ‘আর্থ পিরামিড’ নিয়েই আজকের লেখা। উত্তর ইতালির দক্ষিণ টাইরোলের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ‘আর্থ পিরামিড’ নামে একটি ভূতাত্ত্বিক গঠন দেখতে পাওয়া যায়।
এগুলো দেখতে অনেকটা লম্বা শঙ্কু আকৃতির এবং মাটি দ্বারা গঠিত। শীর্ষ প্রান্তে একটি পাথর থাকে প্রাকৃতিক পিরামিডগুলোর। ভূমির এই অস্বাভাবিক কাঠামোগুলো তৈরি হওয়া শুরু হয়েছিল বরফ যুগের শেষে, যখন হিমবাহ গলতে শুরু করেছিল। ইতালির টাইরোল অঞ্চলের মাটি শুষ্ক অবস্থায় পাথরের মতো শক্ত। তবে বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটি নরম কাঁদায় পরিণত হয়। এসময় ভূমিধ্বস শুরু হয় এবং মাটিতে ১০ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত খাঁড়া আঁকার সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে মাটির এই ঢালগুলো বেশিরভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তবে যে স্থানে মাটির উপর শিলা থাকে সেখানে মাটি বৃষ্টির পানিতে ক্ষয়ে যায় না। বৃষ্টির সময় আশেপাশের উন্মুক্ত মাটি ধ্বসে যায়। ফলে শিলাযুক্ত মাটির স্থানে খাঁড়া ঢাল তৈরি হয়। এগুলোকেই ‘আর্থ পিরামিড’ বলে।
একই জায়গায় অনেকগুলো মাটির স্তম্ভ সৃষ্টি হতে পারে। যেগুলো দেখে হয়তো অনেকে বৃহৎ উইপোকার ঢিবিও ভাবতে পারেন। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ‘আর্থ পিরামিড’ তৈরি হতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। কয়েকশ বছর থেকে কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে এই পিরামিড গড়ে উঠতে। এই পিরামিডগুলোও ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। তবে তা আশেপাশের মাটি থেকে অনেক ধীরে। ভবিষ্যতে হয়তো এই দীর্ঘ মাটির স্তম্ভগুলোর উপরে থাকা শিলাগুলো পড়ে যাবে মাটি ক্ষয়ে। তখন ‘আর্থ পিরামিড’ হিসেবে খ্যাত মাটির স্তম্ভগুলোও দ্রুত ধ্বসে যাবে।