সবার ভালোবাসা প্রকাশের ধরন একরকম নয়। সেটা পিতা–মাতা-সন্তান, ভাইবোন বা আত্মীয়স্বজন—ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা দেখা যায়। একেকজন একেকভাবে তাদের আবেগ দেখায়। কেউ অতি আবেগে জড়িয়ে ধরে হয়তো কপালে চুমু খায়, আর কেউ দূর থেকে ‘ভালো থেকো’ বলাতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বলছি না দূর থেকে বললে ভালোবাসার কমতি থাকে, শুধু প্রকাশের ধরন ভিন্ন এই যা। ও রকম একজন আমারও ছিলেন, আমার প্রতি কলিজা ভরা ভালোবাসা যিনি তাঁর কথা দিয়েই সব সময় বুঝিয়ে দিতেন।
শিক্ষক ছিলেন বলেই কি না কি জানি, ও রকম বুকে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বোলানো ভালোবাসা তেমন একটা দেখিনি ওনার কাছে। মুখের কথা যার এতটা ভারী, এতটা মিষ্টি আর ভালোবাসায় ভরপুর, তিনি হয়তো অন্য কিছুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতেন না। আমিও সব সময় শতভাগ মনে পুরে নেওয়ার চেষ্টা করতাম।
সবই ভালো ছিল হয়তো, সন্তান হিসেবে মনের একটা চাহিদা তবু থেকে যেত। ভাবতাম, আমারও মাঝেমধ্যে বুঝি ইচ্ছে করে না, আমার বাবা আমাকে বুকে টানবে, মাথায় হাত বোলাবে। তাই অপেক্ষায় থাকতাম, সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত দুটি রহমতের দিনের জন্য, দুটি বিশেষ দিন যেদিন সবাই সবার সঙ্গে হাত মেলায়, বুকে বুক মিলিয়ে মোবারকবাদ জানায়। হ্যাঁ, ঈদের দিন আর কোরবানির দিন, এই দুটি দিনেই সুযোগ পেতাম ওই মানুষটার সান্নিধ্যে যাওয়ার, তা–ও বেশ অপেক্ষার পর।
পেশায় শিক্ষক ছিলেন বলে ওনার অগণিত ছাত্র, এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে করতে মসজিদ ছেড়ে বের হতেই অনেক সময় কেটে যেত, আমি ছেলে হয়েও শেষ দিকে সুযোগ পেতাম।