ওরা ভয়ঙ্কর : রুখবে কে?

জাগো নিউজ ২৪ সম্পাদকীয় প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২০, ০৯:০১

মাদকসেবীরা দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। টাঙ্গাইলের সখীপুরে মাদকসেবনে বাধা দেয়ায় একটি বসতবাড়িতে হামলা ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে উপজেলার কালিদাস বাজার এলাকার ইমরান হোসেনের বসতবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় মাদকসেবী মাসুম মিয়ার (২৫) নেতৃত্বে ১২ থেকে ১৫ জনের একটি দল এ তাণ্ডব চালিয়েছে বলে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর মাদকসেবীরা ইমরানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে টিনের বেড়া ভাঙচুর করে।

উপজেলার কালিদাস বাজার এলাকার নূরুল ইসলামের ছেলে মাসুম মিয়া দীর্ঘদিন ধরেই তার বন্ধুদের নিয়ে প্রতিবেশী ইমরানের পেঁয়ারা বাগান ও বাসতবাড়ির পাশে মাদকসেবন করে আসছে। ইমরান প্রায়ই তার বাড়ির আশপাশে মাসুম ও তার বন্ধুদের মাদকসেবনে নিষেধ করে। শনিবার সন্ধ্যায় এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক-বির্তক ও হাতাহাতিও হয়।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ধ্যার পর মাদকসেবী মাসুম ১২ থেকে ১৫ জনের সংঘবদ্ধ দল নিয়ে ইমরানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে টিনের বেড়া ভাঙচুর করে। বিষয়টি সখীপুর থানায় জানালে রাত ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ভুক্তভোগী ইমরানের অভিযোগ রাতে বৃষ্টি হওয়ার সুযোগে এলাকার ওই চিহ্নিত মাদকসেবীরা তার ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালিয়েছে।

ওরা বেড়ার টিন পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গেছে। মাদকসেবীরা সমাজের জন্য কতটা ভয়াবহ উঠছে এ থেকেই প্রমাণিত। যেকোনো মূল্যে এদের রুখতে হবে। সমাজ থেকে দূর করেতে হবে মাদক। মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এটি অনুধাবন করেই মাদকনির্মূলে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভবান ব্যবসা। বিশেষ করে ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজলভ্য ও বহনযোগ্য বলে এর বিস্তার দেশজুড়ে। সত্যি বলতে কি দেশের এমন কোনো এলাকা খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে মাদকের থাবা নেই। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন মাদককারবারের সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন কলাকৌশলের আশ্রয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে।

দেশজুড়ে এক বিশাল জাল বিস্তার করে আছে এই মরণ নেশার ভয়াবহ সিন্ডিকেট। আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র মাফিয়াদের সঙ্গে রয়েছে এদের শক্ত ও গভীর যোগাযোগ। মাদকের রয়েছে বিভিন্ন রুট। বিমানবন্দর থেকে শুরু করে স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সীমান্ত এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। এর কিছু ধরা পড়ে।

বাকিটা চলে যায় মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাছে। রাজধানীতেও মাদকব্যবসা রমরমা। মাদকের জগতে এক সময় ‘হেরোইন’ নামক মরণনেশা ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। এ পদার্থটি মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে নিঃশেষ করে অবধারিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এটি খুব দামি বলে পরবর্তী সময়ে এর স্থান দখল করে নেয় ফেনসিডিল ও ইয়াবা। বর্তমান নেশাসক্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এ দুটি নেশাদ্রব্য বেশি জনপ্রিয়। একে ঘিরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে বিশাল নেটওয়ার্ক।

ফেনসিডিলের চেয়ে ইয়াবাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও অমিত সম্ভাবনা। ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়, প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা, হতাশা এবং মূল্যবোধের অভাবের সুযোগ নিয়ে মাদক তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তরুণ সমাজের প্রতি।

বেকারত্বও মাদকের বিস্তারে সহায়ক-এমন কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। এই মরণ নেশার বিস্তারে সমাজে একদিকে যেমন অপরাধ বাড়ছে, তেমনিভাবে নষ্ট হচ্ছে সামাজিক শৃঙ্খলা। এই অবস্থা চলতে থাকলে একটি সমাজের অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি সহজলভ্য যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে। দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাট মাদক কারবারী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও তাদের মূল কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তিবর্গ এসব সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। মাদকের সর্বনাশা দিক নিয়ে আমরা সম্পাদকীয় স্তম্ভে অনেকবারই লিখেছি। কিন্তু অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us