অনিতা তখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। কেরলের কোল্লামের ওয়াচিরা গ্রামে থাকত কিশোরী অনিতা। সেই গ্রামেই কোচিং সেন্টারে পড়াতেন বিক্রমণ। রাজনৈতিক কার্যকলাপেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তাঁর কোচিং সেন্টারে টিউশন পড়তে যেত অনিতা। পার্টির অনুষ্ঠানেও দেখা হত তাঁদের। এই ভাবেই এক দিন তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দিনে দিনে সেই সম্পর্ক আরও গভীর হয়। কয়েক বছর পরে বাড়িতে বিক্রমণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা জানান অনিতা। কিন্তু সেনাবাহিনীর অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অনিতার বাবা সেই সম্পর্ক মেনে নেননি। পরে সেই গ্রামেরই অন্য এক যুবকের সঙ্গে অনিতার বিয়ে দেন তিনি। সম্পর্কিত খবর ভিন্ন প্রেমের গল্প, প্রেমিকের সঙ্গে মায়ের বিয়ে দিল মেয়েরাএ জন্যই বিয়ের পর আত্মহত্যা করেছিল রেখার স্বামী?অক্ষয়ের সঙ্গে কারিশমার বিয়ে পাকা, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ান একজন! অন্য পাত্রের সঙ্গে অনিতার বিয়ের খবর পেতেই মন ভেঙে যায় বিক্রমণের। ওয়াচিরা গ্রাম পুরোপুরি ভাবে ত্যাগ করেন তিনি। চলে যান কোট্টয়মের চিভারাতে। সেখানে গিয়ে তিনি আবার শিক্ষকতা শুরু করেন। প্রেমিককে হারিয়ে বাবার দেখা পাত্রের সঙ্গেই বিয়ের পর সংসার করছিলেন অনিতা। তাঁদের দুই কন্যা সন্তানও হয়। বড় মেয়ে অথিরা ও ছোট মেয়ে অ্যাশলিকে নিয়ে ছিল অনিতার জীবন। তাঁর স্বামী ছিল সুরাসক্ত। অথিরার বয়স যখন আট, তখন আত্মঘাতী হন অনিতার স্বামী। ছোট দুই মেয়েকে একাই মানুষ করতে থাকেন অনিতা। জমি জায়গা বিক্রি করে, নিজে বিভিন্ন রকম কাজ করে রোজগার করেন। তা দিয়ে লেখাপড়া শেখান দুই মেয়েকে। এ ভাবেই কেটে যাচ্ছিল অনিতার জীবন। মেয়েরাও বড় হতে থাকে। তাঁরও বয়স বাড়তে থাকে। সময়টা ২০১৬। অনিতার দুই মেয়ে তখন বেশ বড় হয়ে গিয়েছে। তাঁরা তখন সাবালিকা। শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসর নিয়ে বিক্রমণও ফিরে এসেছেন ওয়াচিরাতে। সে বছরই এক দিন বিক্রমণের সঙ্গে দেখা হয় অনিতার। জীবনের প্রথম প্রেমিকের সঙ্গে দেখা হতেই পরিণতি না পাওয়া প্রেমের বেদনায় মন যেন আরও ভারাক্রান্ত হয় অনিতার। কিন্তু মুখ ফুটে সে কথা তিনি মেয়েদের বলতেও পারেছিলেন না। এক দিন সেই জড়তা কাটিয়ে নিজের প্রেম হারানোর গল্প মেয়েদের বলেন তিনি। অথিরা এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘নিজের জীবনের গল্প বলার সময় মায়ের গলা বুজে আসছিল। প্রেমভঙ্গের ব্যথা মায়ের চোখে মুখে ফুটে উঠছিল।’’ তার পর থেকেই মাকে তাঁর পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে থাকেন অথিরা ও অ্যাশলি। দুই বোন মিলে ঠিক করেন ফেলেন বিক্রমণের সঙ্গে বিয়ে দেবেন মায়ের। কিন্তু কী ভাবে? সাহস সঞ্চয় করে এক দিন তাঁরা দেখা করেন বিক্রমণের সঙ্গে। জানান তাঁদের ইচ্ছার কথা। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। অথিরা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিক্রমণ তাঁদের ফিরিয়ে দিয়ে বলেন, “তোমরা বড় হয়েছ। মায়ের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবার আগে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবো। সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” কিন্তু অনিতার দুই মেয়ে হাল ছাড়েননি। বার বার দেখা করেন বিক্রমণের সঙ্গে। বিক্রমণকে বোঝাতে থাকেন। তার পর বিয়ের জন্য রাজি করান তাঁকে। পাশাপাশি মাকেও বিয়ে করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেন দুই বোন। ২০১৬-র ২১ জুলাই বিক্রমণের সঙ্গে বিয়ে হয় অনিতার। ৫২ বছর বয়সে নিজের হারানো প্রেম ফিরে পান অনিতা। নিজেদের বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতদের উপস্থিতিতে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম প্রেমিককে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন দুই মেয়ে। দুই যুবতীর উদ্যোগে ফের জোড়া লাগে ভেঙে যাওয়া প্রেম। তবে এই বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল অথিরা ও অ্যাশলিকে। তাঁদের অনেক নিকট আত্মীয়ই প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিল এই বিয়েতে। কিন্তু সারা জীবন কষ্ট পাওয়া মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে বদ্ধপরিকর মেয়েদের ইচ্ছার কাছে টিকতে পারেনি সেই বাধা। এ ব্যাপারে অথিরা জানিয়ছেন, “আমার বয়স যখন আট, তখন বাবা আত্মঘাতী হন। মায়ের স্নেহের ছায়া সেই দুঃসময়ে আমাদের আগলে রেখেছিল। আমাদের পড়াশোনা করাতে সারা জীবন প্রচুর পরিশ্রম করেছে মা। আমাদের স্বপ্নপূরণের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েছে। তাই মায়ের জীবনে একটু আনন্দ দিতে না পারলে আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসা মর্যাদা পাবে না।” বিক্রমণকে বিয়ের পর দুই মেয়ের সঙ্গে আনন্দেই কেটেছে অনিতার জীবন। চার বছর আনন্দে কাটার পর গত মাসে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বিক্রমণ। সে সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। বিক্রমণের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সম্প্রতি অথিরা বলেছেন, “আমরা ওঁকে খুব মিস করি। কিন্তু ভেঙে যাওয়া প্রেমকে পরিণতি দিতে পেরে আমরা খুব খুশি। উনি ফিরে এসে হাসি ফুটিয়েছিলেন মায়ের মুখে।”