লকডাউন: কেউ চান কেউ চান না কেন?

প্রথম আলো প্রতীক বর্ধন প্রকাশিত: ০৮ মে ২০২০, ০৮:০০

বাংলাদেশে যে সাধারণ ছুটি চলছে তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যাঁরা মাস গেলে নিশ্চিত মাইনে পান, তাঁরা ছুটি উপভোগ করছেন। আর যাঁরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, তাঁরা অনেকে কাজ হারিয়েছেন, অনেকে কমবেশি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সমস্যাটা ঠিক এখানেই। দিন আনি দিন খাই মানুষের দায়িত্ব নেওয়া হয়নি বলেই পরিপূর্ণ লকডাউন ঘোষণা আসেনি। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত অপ্রতুল বলেই এই সমস্যার উদ্ভব। মানুষকে বাধ্য হয়ে পথে নামতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান কয়েক বছর ধরেই বলে আসছেন, পাকিস্তান আমলে যেখানে ছিল দুই অর্থনীতি, সেখানে দেশে এখন দুই সমাজ সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে সেটাই আরও স্পষ্ট হয়েছে।  উন্নত দেশে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে। মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবারসহ জরুরি পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের বাস্তবতা হচ্ছে, সাধারণ ছুটি ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে খেটে খাওয়া মানুষকে পথে নামতে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যাঁদের মাস শেষে নিশ্চিত বেতনের জোগান আছে, তাঁরা দিন আনি দিন খাই মানুষের অস্থিরতায় বিরক্ত। অথচ এঁরাই শ্রমশক্তির বড় অংশ। আর এই শ্রমশক্তির ৮৬ ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন। তবে বেতনভোগীদেরও একটা অংশের বেতনকর্তন কিংবা অনিশ্চিত হয়েছে। লকডাউনে তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত। প্রত্যক্ষ কর পুরোটা আদায় করতে পারে না বলে ভ্যাটের ওপর যেহেতু সরকার নির্ভরশীল, ঈদের আগে সম্ভবত সে কারণেই শপিংমল খোলার ঘোষণা। এপ্রিলের মধ্যভাগে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি পরিবারকে মাসে আট হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়ার সুপারিশ করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সিপিডির সুপারিশ ছিল এ রকম: দেশের ১ কোটি ৭০ লাখ থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ পরিবারকে দুই মাস এই টাকা দেওয়া যেতে পারে। তবে প্রণোদনার টাকা মাসে মাসে নয়, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে পরিবারপ্রতি ২ হাজার টাকা করে দেওয়া যেতে পারে। সিপিডি হিসাব করে দেখিয়েছে, এসব দিন আনি দিন খাই মানুষকে আর্থিক প্রণোদনা দিলে সব মিলিয়ে ২৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা থেকে ২৯ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা লাগবে। তারা মনে করে, আর্থিক প্রণোদনা দিলে শুধু দরিদ্র মানুষ উপকৃতই হবে না; এতে যেমন চাহিদা বাড়বে, তেমনি অর্থনীতিতে চাঙা ভাব ফিরে আসবে। তবে আশার কথা হলো, শেষমেশ সরকার বলেছে, ঈদের আগে কর্মহীনদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতির যে আকার, তাতে এই টাকার সংকুলান করা বিশেষ কোনো সমস্যা নয়। ধারা যাক, টাকার সংকুলান করা গেল, কিন্তু সেটা বিতরণ করাও চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য দরিদ্র মানুষের তালিকা থাকতে হবে। সঙ্গে এদের সবার মোবাইল ব্যাংক হিসাব দরকার। অন্যদিকে ত্রাণ বিতরণেও প্রশাসন বিপাকে পড়েছে, তার কারণ এই তালিকা না থাকা। ত্রাণ দেওয়ার সময় অনিয়মের প্রধান কারণ হলো দেশে ধনী ও দরিদ্রের তালিকা না থাকা। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ টাকা ও ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা আনতে ২০১৩ সালে প্রতিটি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজে হাত দেয় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় খানা ডেটাবেইস জরিপ (এনএইচডি) চালিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ধনী-দরিদ্রের তালিকা তৈরি করা। ৩২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কোটি খানার তথ্য সংগ্রহ করার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে দুবার। বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু কাজ আর শেষ হয় না। অন্যদিকে সরকার টাকা পায় রাজস্ব থেকে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির নিরিখে আমরা এখন বিশ্বের শীর্ষ কাতারে, অথচ রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে নিচের সারিতে। অর্থাৎ কর-ফাঁকির প্রবণতার দিক থেকে আমরা শীর্ষে। করোনার প্রকোপে চলতি বছর রাজস্ব ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদেরা বলছেন। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনবোধে টাকা ছাপানোও যেতে পারে বলে মনে করেন এবারের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক সেনসহ অনেক অর্থনীতিবিদ। টাকা ছাপানোর প্রসঙ্গ আসার কারণ হচ্ছে, দুর্নীতি ও রাজস্ব-জিডিপির নিট অনুপাত। আর সরকার প্রত্যক্ষ কর আদায় করতে পারে না বলে ভ্যাট আদায়ে জোর দেয়। ঈদের আগে সম্ভবত সে কারণেই শপিংমল খোলার ঘোষণা। রাস্তায় গাড়ি-বাইকের শব্দ। সবজি বিক্রেতা থেকে শুরু করে ফল বিক্রেতা, মাছ বিক্রেতা–সবাই রাস্তায় পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। মানুষের চলাচল স্বাভাবিক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য দোকানও একটি-দুটি করে খুলতে শুরু করেছে। অথচ দেশে করোনা সংক্রমণের হার এই মুহূর্তে চূড়ান্ত পর্যায়ে উঠেছে। অথচ এঁদের কাছে যদি খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়া যেত, তাহলে ঘর থেকে বেরোনোর দরকার হতো না। সেটা সরকার পারবে না বলেই বোধ করি এত শিথিলতা।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us