এ বছরে কলকাতায় দুর্গা পুজো নিয়ে রাজনীতির দড়ি টানাটানি বেশ প্রবল হয়ে পৃষ্ঠা ৫ কলাম ৪ উঠেছে। সাধারণভাবে কলকাতা শহরের প্রায় সব পুজোর কর্তৃত্ব থাকে শাসক রাজনৈতিক দলের নেতা ও মন্ত্রীদের হাতে। এবার অবশ্য রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত বিজেপি শুরুতেই চেষ্টা করেছে বেশকিছু পুজো কমিটির কর্তৃত্ব হাতে নিতে। সে ক্ষেত্রে সফল তারা হন নি। তবে একটি দুটি কমিটিকে বাগে আনার ব্যবস্থা তারা করে ফেলেছে। আর এই সব পুজোর উদ্বোধনে দলের সভাপতি অমিত শাহকে আনা হচ্ছে। আনা হচ্ছে দলের কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর এক সপ্তাহ আগে থেকেই পুজোর উদ্বোধন শুরু করে দেন। এবারো তার কোনো ব্যতিক্রম হবে না বলে দলীয় সূত্রের খবর। বরং এবার কলকাতা ছাড়িয়ে শহরতলির পুজো উদ্বোধনেও দেখা যাবে মমতাকে। কিন্তু বিজেপির রাজ্য নেতারা চাইছেন, দুর্গা পুজোকে অবলম্বন করে তাদের রাজনৈতিক উপস্থিতিকে আরো তীব্র করে তুলতে। এবার তাই তারা পুজোকে পুরস্কার দেবার ব্যবস্থাও করেছে। এমনিতেই সরকারি ও বেসরকারিভাবে শ্রেষ্ঠ পুজো থেকে শ্রেষ্ঠ বারোয়ারি পুজো, মূর্তি থেকে মণ্ডপ সজ্জা নিয়ে বিস্তর পুরস্কার দেয়া হয়। কিন্তু বিজেপি হেঁটেছে অন্যপথে। ভারতীয় জনতা শাদ সম্মান প্রতিযোগিতায় পুরস্কার দেয়া হবে সেরা অর্চনা, সেরা মহাভোগ, সেরা আরতি ও সেরা সিঁদুর খেলার জন্য। সব সংগঠনকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে। সিঁদুর খেলার পুরস্কার বাদে বাকি সব প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেয়া হবে নবমীতে। প্যান্ডেলে গিয়ে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। এই প্রতিযোগিতার জন্য জুরি কমিটি বাছাই করা হয়েছে। তারা যেমন মণ্ডপে ঘুরবেন তেমনি ভিডিও ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। ইতিমধ্যেই ৭০টির বেশি ক্লাব প্রতিযোগিতায় অংশ নেবার জন্য আবেদন করেছে। একটি গাছের পুনর্জন্মগাছের মৃত্যু যেখানে নগর সভ্যতার প্রসারে অবধারিত ধরে নিয়ে যখন তখন কেটে ফেলা হচ্ছে ঠিক তখনই কলকাতার বুকে একটি শতাব্দী প্রাচীন গাছের পুনর্জন্ম হয়েছে। গাছটি একটি ঔষধিগুণ সম্পন্ন হরিতকি গাছ। এশিয়ার প্রথম মেডিকেল কলেজ স্ট্রিটের কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে একশ’ বছর আগে গাছটি লাগানো হয়েছিল। এখন সেই গাছটি ২৫ ফুট উঁচু হয়ে ডালপালা ছড়িয়েছে চারদিকে। কিন্তু হাসপাতালের একটি অংশ সম্প্রসারণের জন্য গাছটিকে নিয়ে পড়েছিলেন কর্তৃপক্ষ বেজায় মুশকিলে। শেষ পর্যন্ত গাছটিকে অন্যত্র সরিয়ে বসানো যায় কিনা তা নিয়ে কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। তাদের পরামর্শে গাছটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত ১৪ই জুন সেই কাজটি করা হয়েছে। তবে সতর্কতা নেয়া হয়েছিল যাতে গাছটি মরে না যায়। প্রথমেই গাছটির শিকড়কে পোক্ত করতে দেয়া হয়েছিল অক্সিন দ্রবণ। গাছটির ডালপালা ছেঁটে দেয়ার ফলে যাতে কোনো সংক্রমণ না হয় সেজন্য ব্যবহার করা হয়েছিল ব্লিটক্স দ্রবণ। কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিকের মতে, একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছকে সরানোর কাজটি ছিল কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। তবে গাছটি সরিয়ে অন্যত্র বসানোর পর দিন রাত নজর রাখা হয়েছিল কোনো সংক্রমণ যাতে না হয়। তবে তিন সপ্তাহ পর পাওয়া গিয়েছে খুশির খবর। গাছটি বেঁচে তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে নতুন পাতা ছেড়েছে। এই ভাবে একটি গাছের পুনর্জন্মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেমন খুশি তেমনি খুশি উদ্যান বিভাগের আধিকারিকরাও। এর আগে উত্তর কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে একটি পূর্ণবয়স্ক গাছকে এই ভাবে অন্যত্র সরানো হয়েছিল। গত এক বছরে এই নিয়ে দুটি পূর্ণবয়স্ক গাছকে হত্যা না করে অন্যত্র সরিয়ে পুনর্জন্ম দানের ঘটনায় সকলেই খুশি। কলকাতা নিয়ে ভোটাভুটির ব্যবস্থানাগরিকরা কেমন দেখতে চান নিজের শহরকে, কোন ক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত, ঘাটতি রয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে-এমনই কিছু প্রশ্ন নিয়ে নাগরিকদের কাছে সরাসরি হাজির হতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। এক কথায় কলকাতা নিয়ে নাগরিকদের ভোটাভুটির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুর পরিষেবাকে উন্নত ও আধুনিক মানের করে তুলতেই এমন পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিকরা সরাসরি নিজেরাই জানাতে পারবেন পছন্দ-অপছন্দের কথা। পুরসভার মতে, এটা এক ধরনের অনলাইন ভোটাভুটি। এক পুরকর্তা জানিয়েছেন, নাগরিকদের কাছে সরাসরি পৌঁছানো না-গেলে তাদের সমস্যা, তারা কী চাইছেন, সেই সব ব্যাপারে দিশা পাওয়া সম্ভব নয়। সেই জন্যই কম সময়ে নাগরিকদের কাছে পৌঁছতে এই পরিকল্পনার কথা ভাবা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিকল্পনা কার্যকর করতে প্রথমে একটি অ্যাপ তৈরি করা হবে। যে অ্যাপ ডাউনলোড করলেই নাগরিকেরা পুরসভার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন। তবে ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করতে যারা আগ্রহী, তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনলাইনেই এই রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। তবে কত জন এই ভোটে অংশ নিতে পারবেন, সেই ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে, কলকাতা পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডের নাগরিকদের এই ভোটাভুটিতে শামিল করা হবে। পুর পরিষেবার উন্নতিতে এবং কলকাতার সামগ্রিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভাবে এই প্রথম নাগরিকদের যুক্ত করা হচ্ছে।বাংলা শব্দের ঐতিহাসিক অভিধানপ্রতিটি বাংলা শব্দের উদ্ভব এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তৈরি হচ্ছে বাংলা শব্দের একটি ঐতিহাসিক অভিধান। তবে অনলাইনে তৈরি হওয়া এই অভিধানের নাম দেয়া হয়েছে শব্দকল্প। এই প্রথম ভারতের মধ্যে কোনো ভাষা নিয়ে এই ধরনের অনলাইন অভিধান তৈরির বিশাল কর্মযজ্ঞে হাত দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য স্কুল অব কালচারাল টেক্সট এন্ড রেকর্ডস। এটি পুরোপুরি চালু হয়ে গেলে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষ বাংলা নিয়ে সহজেই গবেষণা করতে পারবেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরীর মস্তিষ্কপ্রসূত এই অভিধান তৈরির উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন, বাংলা এমন একটি ভাষা যার প্রতিটি শব্দ বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। তাই প্রতিটি শব্দের প্রথম উদ্ভব, তার ব্যবহার, তার ক্রম অগ্রগতি এবং বিবর্তন বর্ণনা রাখা হবে। ইতিমধ্যে এক ডজনের বেশি অধ্যাপক, ছাত্র ও গভেষক শব্দ সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। জানা গেছে, টেক্সট থেকে শব্দ বাছাই করে তা উদ্ভবের তারিখ অনুযায়ী সাজানোর জন্য বিশেষ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং সিস্টেমের ব্যবহার হচ্ছে। শব্দের ক্ষেত্রে কোনো বাছবিচার করা হবে না। বড়লোকদের ভাষা, মধ্যবিত্তের ভাষা থেকে শুরু করে স্ল্যাং ভাষাও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই অনলাইন অভিধান তৈরির কাজ শেষ হলে যে কেউ এই অভিধান ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না। অভিধান প্রস্তুতের সঙ্গে যুক্তরা জানিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে শব্দের উচ্চারণ ও ধ্বনিবিন্যাস অভিধানে যুক্ত করা হবে। আগামী বছরের শেষ নাগাদ এই অভিধান তৈরির প্রাথমিক কাজ শেষ হবে। এই ধরনের একটি উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখভাষা বিশেষজ্ঞরা। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক কাজ। বাংলা ভাষার যে কোনো শাখার উচ্চশিক্ষার্থীরা এটি থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। চালু হয়েছে মানবতার কাফেঅভিনবত্বে কলকাতার জুড়ি মেলা ভার। এবার কলকাতার বুকে চালু হয়েছে মানবতার ক্যাফে। তবে এটি আসলে একটি ভেগান কমিউনিটি ক্যাফে। আর এটি যারা চালু করেছেন তারা হলেন উবানটু কমিউনিটির সদস্য। খটমট এই শব্দটির অর্থ কি, কোন ভাষার শব্দ এটি সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। আসলে উবানটু জুলুভাষার শব্দ। এর অর্থ মানবতা। একসঙ্গে থাকার প্রেরণায় একদল তরুণ-তরুণী মিলে দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়াতে তৈরি করেছে এই উবানটু কমিউনিটি ক্যাফেটি। পরিবেশবান্ধব এই ক্যাফেতে দূষণকে শতহাত দূরে রাখা হয়েছে। নারিকেলের খোলে তৈরি বাসনে এবং কাঠের থালায় পরিবেশন করা হচ্ছে খাবার। টেবিলে প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে কাচের বোতলে দেয়া হচ্ছে পানীয়। এই ক্যাফেতে দূষণের কথা ভেবেই রাখা হয় নি কোনো এসি। চলছে পাখা। পুরনো ফেলে দেয়া আসবাবকে সাজিয়ে গুছিয়ে করা হয়েছে ক্যাফের টেবিল চেয়ার। মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে রান্নার লোভে এর শেফের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন এক অবাঙালি। পাওয়া যায় পিৎজা, শাহি বড়া, বড়িওলি পাস্তা থেকে গো গ্রিন স্মুদি পর্যন্ত। উবানটু কমিউনিটির মতাদর্শ হল, ইট, লিভ এন্ড শেয়ার। সেদিকে লক্ষ্য রেখে তিনতলা বাড়িটির নিচ তলায় হয়েছে ক্যাফে। দোতলায় হোস্টেল। আরতিন তলায় ইভেন্টের জায়গা। পর্যটকরা কলকাতায় এসে উবানটুর হোস্টেলে থাকতেও পারবেন। তবে খেতে হবে ভেগান খাবার।