মিন্নি অসুস্থ, বিষণ্ন ও স্মৃতিকাতর

মানবজমিন প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৫:২৯

বরগুনা কারাগারে ১ মাস ১৮ দিন কেটে গেছে মিন্নির। বাসায় ফিরে চুপচাপ হয়ে আছেন তিনি। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন স্বজনদের দিকে। কিছুই বলছেন না। কি যেন একটা চাপা কষ্ট বুকে বিঁধে আছে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে চোখ থেকে বেরিয়ে আসছে পানি। আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন মিন্নির বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন কিশোর। তিনি বলেন, একদিকে স্বামী হারানোর শোক, অপরদিকে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা। সব মিলিয়ে ভালো নেই আমার নির্দোষ মেয়েটা।রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হয়ে যাওয়ার পর জামিনে মুক্ত রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে তার।মিন্নির পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু মামলার পরবর্তী তারিখ হাতের নাগালে থাকায় তাকে ভালো কোনো হাসপাতালে ভর্তি করা যাচ্ছে না।মিন্নির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন মিন্নি। স্মৃতিকাতর ও বিষণœতা নিয়ে বরগুনা পৌরসভার মাইঠা এলাকার বাবার বাড়িতে বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় রয়েছেন মিন্নি। সদ্য কারামুক্ত মিন্নির সঙ্গী এখন শারীরিক অসুস্থতা। একপ্রকার মানসিক ভারসাম্যহীন হিসেবে বাবার বাড়িতে জীবনযাপন করছেন মিন্নি।মিন্নির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে মিন্নি ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল, চঞ্চল ও স্বজনদের সঙ্গে সদালাপী। অনেক স্বজনের মাঝেও এখন সেই মিন্নি ভুগছেন একাকিত্বে। শারীরিকভাবে অসুস্থ মিন্নি এখন স্বামী রিফাত শরীফের স্মৃতিতে কাতর। একরাশ বিষণ্নতা নিয়ে একাকি ঘরে দিন কাটে মিন্নির। তবে মিন্নির এমন জীবনযাপনে চিন্তিত স্বজনরা। উদ্বিগ্ন তার বাবা ও মা।মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, দুই হাঁটুতে কালো দাগ রয়েছে মিন্নির। হাঁটুর ব্যথায় হাঁটতে পারে না সে। চঞ্চল ও সদালাপী মিন্নি এখন কারও সঙ্গে কথা বলে না। খেতে চায় না কিছুই। নিজের ঘরে সবসময় চুপচাপ থাকে সে। কখনো কখনো কাঁদে মিন্নি। যে ঘরে মিন্নি থাকে সেই ঘরে রিফাতের সঙ্গে তার অনেক স্মৃতি। এসব স্মৃতি মিন্নিকে আপ্লুত করে। ঘুমের মধ্যেও কেঁদে ওঠে, চিৎকার করে মিন্নি।মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরও বলেন, মিন্নি অনেক অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমরা মিন্নির আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েছি। কয়েকদিন পর রিফাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। ওই তারিখে মিন্নিকে আদালতে হাজির হতে হবে। ওই তারিখের পরে মিন্নির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। আপাতত চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে মিন্নির চিকিৎসা চলছে।আমি এখনও সাদা পোশাকধারী পুলিশ আতঙ্কে আছি। সার্বক্ষণিক আমি ও আমার পরিবারের পেছনে তারা লেগে আছে। আমি আবারও প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করছি এ মামলা পুনঃতদন্ত করে সত্যকে উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক।মিন্নির চাচা মো. আবু সালেহ বলেন, মিন্নির খাওয়া-দাওয়া নেই, ঘুম নেই; আছে শুধু বিষণœতা। উদাসীনভাবে একেক সময় একেক দিকে তাকিয়ে থাকে মিন্নি। তার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তার পেটে এবং বুকে ব্যথা। আমরা মিন্নিকে নিয়ে চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন।মিন্নির জামিনে কারামুক্ত থাকার ব্যাপারে আদালতের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। আমরা সেসব নির্দেশনা মেনে অতি দ্রুত মিন্নির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করব। মিন্নির স্বাভাবিক জীবনযাপন ও চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটে এমন কাজ থেকে উৎসুক মানুষকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাই আমরা।মিন্নির অসুস্থতার বিষয়ে জানতে চাইলে মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, মিন্নির অসুস্থতার বিষয়টি আমি জানি। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সঙ্গে কথা বলেছি আমি। মিন্নির চিকিৎসার জন্য আমি মিন্নির বাবাকে পারামর্শ দিয়েছি। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলার ধার্য তারিখ রয়েছে। তার আগেই মিন্নিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেকোনো যায়গায় নেয়া যাবে। তবে ধার্য তারিখে মিন্নিকে আদালতে উপস্থিত থাকতেই হবে।মিন্নির বিষয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহবার উদ্দীন বলেন, মিন্নি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়াটা স্বাভাবিক। তার স্বল্প বয়সের জীবনে যা ঘটেছে, গণমাধ্যমে তা দেখে আমরাই ঘাবড়ে গেছি। তার সুন্দর জীবন লন্ডভন্ড করে দিয়েছে একটি ঘটনা। জীবনে ঘটে এসব ঘটনা যখন তার মনে পড়ে, সেসব দৃশ্য যখন তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন তার স্বাভাবিক থাকার কথা নয়। এসব কারণে মূলত মিন্নি উদাসীন, বিষণœ ও স্মৃতিকাতর।চিকিৎসক মো. সোহবার উদ্দীন আরও বলেন, সময় নষ্ট না করে মিন্নিকে কাউন্সিলিংয়ের পাশাপাশি একজন মানসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানো দরকার। এতে মিন্নি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। পাশাপাশি মিন্নির শারীরিক অন্য কোনো অসুস্থতা থাকলে তারও চিকিৎসা করানো দরকার।উল্লেখ্য, বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দুই শর্তে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। যে দুই শর্তে মিন্নিকে জামিন দেয়া হয়েছে তা হলো, মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না ও তাকে তার বাবার জিম্মায় থাকতে হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

মিন্নির ফের জামিন আবেদন

কালের কণ্ঠ | হাইকোর্ট
১ বছর, ৬ মাস আগে

মিন্নিকে এখন চেনাই দুষ্কর!

ঢাকা টাইমস | বরগুনা সদর
২ বছর, ১ মাস আগে

মিন্নির শারীরীক অবস্থা ভালো নেই, জরুরী চিকিৎসা আবেদন

ইত্তেফাক | কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার
২ বছর, ৯ মাস আগে

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us