(প্রিয়.কম) মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ৮০ হাজারে গিয়ে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সমন্বয় কমিটি।
সংস্থাগুলোর সমন্বয় কমিটির একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন করে অনুপ্রবেশের ঘটনা না ঘটলেও সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা পূর্বে তালিকাভূক্ত হননি। তাদেরকে নতুন করে তালিকাভুক্তির কারণেই এ বৃদ্ধি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘দুটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া নতুন প্রায় ৩৫ হাজারের রোহিঙ্গার কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার এই সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে। যার উল্লেখ সর্বশেষ হালানাগাদ প্রতিবেদনে ছিল না।’
এদিকে ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা দ্বিগুণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, মিয়ানমার থেকে গত মাসে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হতে পারে।
গত মাসের ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যের প্রায় ৩০ পুলিশ পোস্টে একসঙ্গে হামলার জেরে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, কুপিয়ে, ধর্ষণের মাধ্যমে হত্যা ও বিভৎস নির্যাতনের খবর উঠে আসতে থাকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটির সরকার। এরপরও তারা নির্যাতন বন্ধ করেনি। উল্টো মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের দাবি, রোহিঙ্গারাই বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। এমন দাবির সমর্থনে সাংবাদিকদের ভুয়া ছবিও সরবরাহ করা হয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে।
নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গার ঢল বাড়তে থাকে। এক সময় তা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। তবে বর্তমানে পালিয়ে আসার হার কমে গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণের মাধ্যমে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত প্রায় ২১৪টি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। একইসঙ্গে সংস্থাটি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সহিংসতা ও নিপীড়নকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এ সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
এদিকে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ নাগরিত্ব এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।
এছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন। যার মধ্যে মিয়ানমার সেনাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত। মিয়ানমারের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত চীনও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দেশটিকে প্রভাবিত করার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ পুনরায় বৈঠকে বসছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য চার সদস্য রাষ্ট্রের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী বাকি চার সদস্যরা হলো রাষ্ট্র মিসর, কাজাখস্তান, সেনেগাল ও সুইডেন।
সূত্র: রয়টার্স
প্রিয় সংবাদ/শান্ত
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন