(প্রিয়.কম) গভীর বনে রাত কাটানোর রোমাঞ্চ পাওয়া এখন হলো আরও সহজ। আগে ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ে থাকতে হত। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে যেখানে পার্বত্য অঞ্চলে অপহরণ, হত্যা, ছিনতাই হয় সেখানে নিরাপত্তার স্বার্থেই বনে ক্যাম্পিং করার অনুমতি ছিল না। বেশিরভাগ অভয়ারণ্যে সন্ধার পর অবস্থানের ক্ষেত্রে ছিল নানান নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এখন বন বিভাগ নিশ্চিত করবে সকল নিরাপত্তা। এমনকি তাবুসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করবে তারা। জেনে নিন বিস্তাড়িত মোহাম্মদ হোসাইন সবুজের কাছ থেকে-
"বনে ক্যাম্প করে তাঁবুর মধ্যে থাকা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। সাধারণত জাতীয় উদ্যানগুলোতেই ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই জাতীয় উদ্যানের মূল আয় হচ্ছে ক্যাম্পিং থেকেই, এ আয় আবার বন সংরক্ষণের কাজেই ব্যবহার করা হয়। আমাদের দেশে ক্যাম্পিং এখনও সেভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি। ট্রাভেল ভিত্তিক গ্রুপগুলো নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পিং ট্রিপের আয়োজন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যে সমস্যাটায় তারা ভুগে সেটা হচ্ছে নিরাপত্তার সমস্যা ও ক্যাম্পিংয়ের অনুমতির সমস্যা। এছাড়া আরেকটা সমস্যা হচ্ছে ক্যাম্পিং গিয়ারের (তাঁবু, ক্যাম্প লাইট, ম্যাট্রেস, স্লিপিং ব্যাগ, ইত্যাদি) অপ্রতুলতা। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সংরক্ষিত বনাঞ্চলে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পিং চালু হয়েছে ২৭ জুন ২০১৭ থেকে স্বল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া তিনটি সাইটে ক্যাম্পিংয়ের কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে ইউএসএইডের ক্রেল প্রকল্প। বর্তমানে যে জায়গাগুলোতে এ সুযোগ পাওয়া যাবে তার বর্ণনা নিচে দেয়া হলো:
নিরাপত্তার চিন্তা যখন নেই তখন দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়ুন। ছবি- কালপুরুষ অপু।
সাধারণ সুযোগ সুবিধা:
বন রক্ষী ও বন পাহারা দলের সাথে সদস্যরা তাদের বন পাহারা দেবার কাজের পাশাপাশি ক্যাম্প সাইটে রাত্রিকালীন পাহারা দিবেন।
যে কোন প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিট অফিসার অথবা সেখানকার সহ-ব্যবস্থাপণা কমিটির সাহায্য নেয়া যাবে।
প্রতিটি সাইটে ভাড়ায় তাবু পাওয়া যাবে। নিজের তাবু থাকলে সেটাও স্থাপণ করা যাবে। অফপিক সিজনে (মার্চ থেকে অক্টোবর) তাঁবু ভাড়া ৩০০ টাকা (২ জনের তাঁবু, ন্যাচার হাইক কিট ৩ মডেল)। নিজের তাঁবু থাকলে প্রতি তাবুর জন্য ১৫০ টাকা (২ জনের জন্য)। সর্বোচ্চ ১০ টা তাঁবু ভাড়া পাওয়া যাবে। প্রতি সাইটে সর্বোচ্চ ৩০ জন এক রাতে থাকতে পারবেন। এছাড়া জন প্রতি সরকার নির্ধারিত বনে প্রবেশ ফি ২৩ টাকা (যেখানে প্রযোজ্য) দিতে হবে।
তাঁবু ভাড়া নিলে সংগে ক্যাম্প লাইট, হ্যামক, স্লিপিং ব্যাগ (শীতকালে) পাওয়া যাবে।
প্রতিটি সাইটে টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে।
আগে থেকে জানিয়ে রাখলে খাবার পাওয়া যাবে (ভাত, ডাল, মাছ/মাংস, ভাজি ১০০-১২০ টাকা ও সকালের নাস্তা ভাজি, ডিম, পরটা ৫০-৬০ টাকা জনপ্রতি)।
এ সমস্ত অরণ্য থেকে অর্জিত আয় বন সংরক্ষণ ও বন পাহারা দলের সদস্যদের ভাতা বাবদ ব্যয় করা হবে।
স্থানগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও যোগাযোগ:
১. খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, খাদিম নগর সিলেট-
কীভাবে যাবেন-
সিলেট শহরের উপকন্ঠে এর অবস্থান। সিলেট শহর থেকে সিএনজি নিয়ে সরাসরি যেতে পারেন অথবা শাহ পরাণ গেইটে নেমে সেখান থেকে সিএনজি নিয়ে যেতে পারবেন।
সর্বোচ্চ ৩০ জন থাকতে পারবেন এক রাতে। তাঁবু ভাড়া পাওয়া যাবে ১০ টি।
যোগাযোগে:
মামুন: ০১৭০২০০৩৪০৩
সংগী হতে পারে পোষা প্রাণীটিও। ছবি- কালপুরুষ অপু।
২. বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান, সীতাকুন্ড-মিরসরাই, চট্টগ্রাম-
কীভাবে যাবেন-
চট্টগ্রামের শহর থেকে মোটামুটি ৪০ কিলোমিটার দূরে এই উদ্যানের অবস্থান। প্রায় ৩,০০০ হেক্টরের এই উদ্যানের মধ্যে খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া সহ অসংখ্য ঝর্ণা। ক্যাম্প সাইট বাওয়া ছড়া লেক ও সহস্র ধারা লেক। প্রতি সাইটে ধারণ ক্ষমতা ৩০ জন করে সর্বোচ্চ ৬০ জন। তাঁবু ভাড়া পাওয়া যাবে ১০ টি।
যোগাযোগ:
সরওয়ার উদ্দিন: ০১৮১৫৫৭৮০৯৩
৩. হাজারিখিল অভয়ারণ্য, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম-
কীভাবে যাবেন-
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে অবস্থিত এই অভয়ারণ্য চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে ফটিকছড়ির বাসে বিবির হাট এসে তারপর সেখান থেকে সিএনজিতে যেতে হবে হাজারিখিল অভয়ারণ্য। সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৩০ জন, তাঁবু ভাড়া পাওয়া যাবে ১০ টি।
যোগাযোগ:
আশীষ: ০১৮১৭২৭৩৭৪০
বিশেষ অনুরোধ:
যারা সত্যিকারভাবে বনকে ভালোবাসেন শুধু তারাই যাবেন। পিকনিক পার্টির জন্য বন না। যে সুযোগটা এতদিন কষ্ট করার পরে ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হচ্ছে দয়া করে সেটাকে ধ্বংস করে দিবেন না।
সম্পাদনাঃ ড. জিনিয়া রহমান।
আপনাদের মতামত জানাতে ই-মেইল করতে পারেন [email protected] এই ঠিকানায়।
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন