সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঠে-ঘাটে-ছাদে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বজ্রাঘাতে প্রতিদিন মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই মহামারির মধ্যে ঘরবন্দী থাকার পরও বজ্রঝড়ে কৃষক, জেলে, তরুণ ও কিশোরের মৃত্যু থামছে না। ‘ইভেন্টের পার্টিকুলার ডে বা শর্ট পিরিয়ডে’ বেশি বজ্রপাত বৈশিষ্ট বেড়ে গেছে। বজ্রপাতের এমন ঘটনাকে ‘শর্ট লিফট লাইটেনিং ফেনোমেনা’ বলা হয়। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর এপ্রিল-মে মাসের পর জুন-জুলাইকেও ‘বজ্রপাতপ্রবণ’ বিবেচনা করে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ আবহাওয়াবিদরা।
কী কারণে বাড়ছে বজ্রপাত, কেন বাড়ছে মৃত্যু—যুগান্তর (৮ জুন ২০২১): বায়ুমণ্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম আবহাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম আবহাওয়া দ্রুত ঠাণ্ডা হওয়ায় প্রক্রিয়ার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও কেন এত বাড়ছে? আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেখা যাচ্ছে শহরের থেকে গ্রামীণ এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি হচ্ছে। ফাঁকা মাঠে চাষের কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হচ্ছে অনেকের।
বজ্রপাতের ‘হটস্পট’ দেশের মধ্যাঞ্চল—বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম (৮ জুন ২০২১): জুনের প্রথম সপ্তাহে জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ বেলায় যখন বর্ষার পদধ্বনি; ঝড়বৃষ্টির দাপট চলছে, তখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঠে-ঘাটে-ছাদে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা বেড়েছে। নেত্রকোনা, নরসিংদী, কুমিল্লা’ মিলে দেশের মধ্যাঞ্চলকে ‘বজ্রপাতের হটস্পট’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ আবহাওয়াবিদরা। এপ্রিল-মে মাসের পর জুন-জুলাইকেও ‘বজ্রপাতপ্রবণ’ বিবেচনা করে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বজ্রপাত: কী করবেন কী করবেন না—বাংলা ট্রিবিউন (৬ জুন ২০২১):
কী করবেন
ক. ফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
খ. বাথটাব, রান্নাঘরের ধাতব পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
গ. বৈদ্যুতিক তারের বেড়া, ধাতব পদার্থ বা সংশ্লিষ্ট বস্তু থেকে দূরে থাকুন। কেননা, ধাতব পদার্থের মাধ্যমে বজ্রপাত অনেকদূর পর্যন্ত চলাচল করতে পারে।
ঘ. পুকুর, নদী–নালা বা হ্রদে মাছ ধরা বা নৌকা ভ্রমণ যেকোনও উপায়ে পরিহার করতে হবে।
ঙ. অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে যেতে হবে।
কী করবেন না
ক. বজ্রপাতের সময় কোনও অবস্থাতেই কংক্রিটের ওপর শোবেন না বা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে থাকবেন না।
খ. উঁচু স্থান অবশ্যই এড়াতে হবে বা নদী, পুকুর, খাল–বিল ইত্যাদির আশপাশে থাকা যাবে না।
গ. কোনও অবস্থাতেই ভূমিতে শোবেন না বা বিচ্ছিন্ন কোনও বড় গাছের নিচে দাঁড়াবেন না।
ঘ. ইস্পাত লোহা জাতীয় জিনিস হাতে নেবেন না।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে যেসব নির্দেশনা দিচ্ছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর—বিবিসি বাংলা (৬ জুন ২০২১): * বজ্রঝড় সাধারণত ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ মিনিট স্থায়ী হয়। এ সময়টুকু ঘরে অবস্থান করুন। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যাবেন, এটি বজ্রঝড় বা বজ্রপাত থেকে সুরক্ষা দেবে।
* বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা খোলামাঠে যদি থাকেন তাহলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে।
* বজ্রপাতের আশংকা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। ভবনের ছাদে বা উঁচু ভূমিতে যাওয়া উচিত হবে না।
* বজ্রপাতের সময় যে কোন ধরণের খেলাধুলা থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে, ঘরের ভেতরে অবস্থান করতে হবে।
* খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছাকাছি থাকবেন না। বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকা বিপজ্জনক ।
* বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে না যাওয়াই উচিৎ হবে। সমুদ্রে বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে।
* যদি কেউ গাড়ির ভেতর অবস্থান করেন, তাহলে গাড়ির ধাতব অংশের সাথে শরীরের সংযোগ রাখা যাবে না।
বজ্রপাত কমলেও বছরে মৃত্যু দেড় শ মানুষের—প্রথমআলো (৫ জুন ২০২১): দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা কমছে। বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও কিছুটা কমেছে। তবে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান হয়নি। কারণ, দেশে এখনো বছরে প্রায় দেড় শ মানুষের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। আর মারা যাওয়াদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষক।
ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার হিসাবে, বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৪০ লাখ বা তার বেশিসংখ্যক বজ্রপাত মেঘ থেকে ভূমিতে নেমে আসে। ২০১৯ সালে তা প্রায় ১০ লাখ কমে যায়। সর্বশেষ গত বছর সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখের কিছু কম। ভাইসালার হিসাবে, বজ্রপাতে গত বছর ১৪৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের দুই বছরের চেয়ে কিছুটা কম।
পাঠকের মন্তব্য(০)
মন্তব্য করতে লগইন করুন