বর্তমানে করোনা শনাক্তের হার কম থাকায় চাহিদাও কমে এসেছে।

দেশে অক্সিজেন সংকটের ‘শঙ্কা’

দেশের চিকিৎসা খাতে বর্তমানে দৈনিক ১২০ টন থেকে ১৫০ টন অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে।

তানজিল রিমন
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৩৫ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১, ১৭:৩৬
প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২১, ১৭:৩৫ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১, ১৭:৩৬


বর্তমানে করোনা শনাক্তের হার কম থাকায় চাহিদাও কমে এসেছে।

(প্রিয়.কম) করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতির অবনতি হলে দেশে যেকোনো সময় অক্সিজেনের সংকট দেখা দিতে পারে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনা সংক্রমণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এ কারণে অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বর্তমানে করোনা শনাক্তের হার নিম্নমুখী হওয়ায় আশঙ্কা আপাতত সংকটের সম্ভাবনা অনেকটাই কম। তবে শনাক্তের হার বাড়লে এই পরিস্থিতি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। হাসপাতালে কোভিড রোগীদের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ’র চাহিদা বাড়লে অক্সিজেনের চাহিদাও বেড়ে যায়।

উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারত ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে। সর্বত্রই অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে এবং অক্সিজেনের অভাবে অনেক করোনা রোগী মারা যাচ্ছে। দেশটির এমন প্রেক্ষাপটে সব ধরনের অক্সিজেন রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। গত ২১ এপ্রিলের পর থেকেই ভারত থেকে অক্সিজেন আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর আগের সপ্তাহে ৪৯৮ মেট্রিক টন ৮৪০ কেজি অক্সিজেন ভারত থেকে বেনাপোল বন্দরে আমদানি হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুশীল রঞ্জন মনে করেন, করোনা ভাইরাস যেভাবে তার গতি পরিবর্তন করছে, ফলে যেকোনো সময় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এজন্য ‍সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। তিনি বলেন, বর্তমানে অক্সিজেনের যেসব উৎস রয়েছে, এর বিকল্প এখনই চিন্তা করা প্রয়োজন। পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় গেলে তখন সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে দেশের চিকিৎসা খাতে অক্সিজেনের চাহিদা ছিল দৈনিক ১০০ টন। করোনার সময় তা বাড়তে শুরু করে এবং বেড়ে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭০ থেকে ২০০ টনে। ওই সময় ভারত থেকে ১০০ টন অক্সিজেন আমদানি করা হতো। তবে এই মুহূর্তে আমদানি বন্ধ থাকলেও এখন পর্যন্ত চাহিদায় কোনো ঘাটতি দেখা দেয়নি। বর্তমানে ১২০ থেকে ১৫০ টন অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে।

দেশে অক্সিজেনের চাহিদা মিটিয়ে থাকে বহুজাতিক কোম্পানি লিন্ডে ও দেশীয় কোম্পানি স্পেকট্রা। তারা দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে লিন্ডে সরবরাহ করছে ৮০ টন এবং স্পেকট্রা সরবরাহ করছে ৩৮ টন। লিন্ডে নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের দুটি নিজস্ব প্লান্টে অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকে। চাহিদা বেড়ে গেলে তারা ভারতে থাকা নিজস্ব প্লান্ট থেকেও দৈনিক প্রায় ৩০ টন অক্সিজেন আমদানি করে ঘাটতি পূরণ করেছে। অন্যদিকে স্পেকট্রা ৫০ টনের মতো অক্সিজেন সরবরাহ করত। আমদানি বন্ধ হওয়ায় সরবরাহের পরিমাণ কমে এসেছে।

চুক্তিবদ্ধ এই দুটি প্রতিষ্ঠানের বাইরে আরও তিনটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান এ কে অক্সিজেন, ইসলাম অক্সিজেন ও আবুল খায়ের স্টিল মেল্টিং মিলকে মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ প্রতিষ্ঠান তিনটি শিল্প অক্সিজেন উৎপাদন করলেও মেডিকেল উপযোগী অক্সিজেন উৎপাদন করেনি। তারা উৎপাদন শুরু করলে অক্সিজেন সংকটের শঙ্কা দূর হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে পড়লে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হয়। আইসিইউ-তে রাখতে হয়।

লিন্ডের মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সায়কা মাজেদ জানান, বর্তমানে শিল্প অক্সিজেন সরবরাহ তারা বন্ধ রেখেছে। যতটুকু উৎপাদন করা হচ্ছে, তার পুরোটাই হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে। চাহিদা কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে না। তবে ভারতীয় স্ট্রেইন যদি দেশেও ছড়িয়ে পড়ে এবং চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন সংকট তৈরি হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক জানান, এখন পর্যন্ত করোনার যে পরিস্থিতি তাতে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়তো হয়নি। তবে যদি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতের মতো ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। কারণ শেষ মুহূর্তে চাইলেই তখন আর অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (হাসপাতাল) পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া প্রিয়.কমকে বলেন, দেশের চিকিৎসা খাতে কোথাও এখন পর্যন্ত অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়নি। কিছুদিন আগে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেলেও বর্তমানে করোনা রোগীর পরিমাণ কমে যাওয়ায় অক্সিজেনের চাহিদাও কমে গেছে।

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...