বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ফাইল ছবি

‘একক’ সিদ্ধান্তের মাঝে ঝুলে আছে ছাত্রদলের ভবিষ্যত

সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ছাত্রনেতাদের দাবি তাদের মধ্যে থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা। যারা পরবর্তীতে নতুন একটি কমিটি উপহার দিয়ে সংগঠন থেকে বিদায় নেবে।

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৯:৩৩ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫২
প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৯:৩৩ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯, ১৯:৫২


বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ফাইল ছবি

(প্রিয়.কম) ছাত্রদলকে বিএনপির রাজপথ আন্দোলন সংগ্রামের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসাবে বলা হয়ে থাকে। যদিও ধারাবাহিক নেতৃত্বের অভাবে ‘ছাত্রদল’ বর্তমানে নিস্ক্রিয় ও স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই ব্যর্থতার তকমা দূর করে অতীতের ঐহিত্য ফিরিয়ে আনা ও রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার উপযুক্ত নেতৃত্বে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড। ভেঙে দেওয়া হয় সংগঠনটির মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি। ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তফসিল ঘোষণায় আসে কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের ভবিষ্যত নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে। সেই মোতাবেক কাউন্সিলের দিনক্ষণও চূড়ান্ত করা হয়ে ছিল ১৫ জুলাই।

নির্দেশনায় একইসঙ্গে নতুন নেতৃত্ব খুজে বের করতে সাবেক ছাত্র নেতাদের দিয়ে প্রথমে একটি, পরবর্তীতে তিনটি কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু স্বল্প সময়ের জন্য হলেও একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মাধ্যমে ছাত্রদল থেকে ‘সম্মানজনক’ বিদায় নিতে আন্দোলনে নামে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির একটি অংশের ছাত্রনেতারা। দাবি আদায়ে বিক্ষোভ, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাঝুলিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়ালে বহিস্কার করা হয় বিক্ষুব্ধ ১২ ছাত্রনেতাকে। আটকে যায় কাউন্সিলের জন্য ঘোষিত কাযক্রম। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে বসেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক ছাত্রনেতারা। বৈঠকে ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পেরে ছাত্রদলের সাবেক নেতারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সেখানেও কার্যকর সিদ্ধান্তে আসতে ব্যর্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। যদিও প্রতিটি বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপির মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন।

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্রদলের কমিটি গঠনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও একে অপরের প্রতি আস্থাহীনতার বিষয়টি। মোটাদাগে বলতে গেলে কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিলের পর দ্রুত নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি ঝুলে আছে তারেক রহমানের ‘একক’ সিদ্ধান্তের ওপরেই। তিনি নেতৃত্বে বয়সের যে সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন সেই সিদ্ধান্তে অটল আছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সাবেক ছাত্রনেতাদের। তখন বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের আশ্বাস দেওয়ার নামে তারেক রহমান সময় কালক্ষেপণ করছেন সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপরেই ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে সৃষ্ট সংকট সমাধানের দিকে এগুলেও শেষ মুহূর্তে আবার জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ছাত্রদলের সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে আসা দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সরে গিয়ে বাকি কাজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির নেতাদের দিয়ে সম্পন্ন করতে তারেক রহমানকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যদিও তারেক রহমান তাদের বলেছেন, একটু সময় নিয়ে হলেও তাদের নিয়েই ছাত্রদলের সঙ্কট সমাধান করবেন।

ছাত্রদল প্রসঙ্গে ১৩ জুলাই দুপুরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন ইস্যুতে একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে স্কাইপিতে যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দ্রুত সময়ে কমিটি গঠনে বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক পরামর্শ দেবেন। কারণ আমি যতটুকু জানি তারেক রহমান ছাত্রদলের কমিটি গঠনে বয়সের যে সীমারেখা দিয়েছেন তিনি সেই সিদ্ধান্তে অটল আছেন। তিনি (তারেক রহমান) আশাবাদী খুব দ্রুত সময়েই ছাত্রদলের কমিটিকে ঘিরে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের পথে হাটবে।’

২০১৪ সালে অক্টোবরে রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটি পাঁচ বছর পর ভেঙে দেওয়া হয় চলতি বছরের ৩ জুন। এরপর ২৩ জুন পরবর্তী কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। ওই ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১১ জুন থেকে বয়সসীমা রেখে কমিটি গঠনের দাবিতে আন্দোলনে শুরু করে বিলুপ্ত কমিটির বড় একটি অংশ। যার ফলে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেও শেষ পযন্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি বিএনপির হাইকমান্ড। ধারাবাহিক বৈঠকের সিদ্ধান্তের পদক্ষেপ বাস্তবায়নে ঝুলে পরে ছাত্রদলের ভবিষ্যত নেতৃত্ব।

বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা। ফাইল ছবি

আন্দোলনরত ছাত্রদল নেতাদের দাবি, সদ্য বিলুপ্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের অক্টোবরে। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের অক্টোবরে। কিন্তু নানা কারণে ২০১৯ সালের ২ জুন পর্যন্ত ওই কমিটির বয়স গড়ায়। এরপর গত ৩ জুন ওই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অথচ কমিটি নির্ধারিত সময়ে ভেঙে দিয়ে পরবর্তী কমিটি গঠন করলে সেখানে নতুন নেতৃত্ব আসার সুযোগ ছিল। তারাও তখন নিয়মিত ছাত্র হিসেবে ওই কমিটিতে স্থান পেতে পারতেন। কিন্তু কমিটির মেয়াদ দুই বছরের জায়গায় পাঁচ বছরে গড়ানোর কারণে তারা ছাত্রদলের পদ-পদবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বিক্ষুদ্ধ একাধিক ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম হাসান—এই তিনজন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়ে নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ায় যারা ছাত্রদলের কমিটিতে আসতে পারেননি, অথচ বয়সও বেড়ে গেছে, তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কী হবে? তারা (বিক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতারা) নিজেরাও ছাত্রদলের পরবর্তী কমিটিতে থাকতে চান না। তাদের  যুক্তি, দুই বছর মেয়াদি কমিটির বয়স ৫ বছর পার হয়ে যাওয়ায় পদবঞ্চিত হওয়া, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, সংগঠনের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করা এবং সংগঠনকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা। বড় বিষয় হচ্ছে ছাত্রদলের পরবর্তী কমিটি তৈরিতে কেন ৮০/৯০ দশকের ছাত্রনেতাদের পছন্দের বলয় মুক্ত করা হবে না। সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মধ্যে থেকে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা, যারা পরবর্তীতে নতুন একটি কমিটি উপহার দিয়ে সংগঠন থেকে বিদায় নেবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপি নেতাদের দুই গ্রুপের ‘রেষারেষি’র কারণে ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে সংকট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান।

রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপে রয়েছেন তারেক রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা রকিবুল ইসলাম বকুল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।

আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বাধীন গ্রুপে আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রিজভী গ্রুপ ছাত্রদলের আগামী কমিটির শীর্ষ দুই পদে আনতে চায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল কমিটির সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমানকে। এ জন্য তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দিয়ে ছাত্রদলের আগামী কাউন্সিলে কেবল ২০০০ সাল-পরবর্তী যেকোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতাবিষয়ক নিয়ম করিয়ে নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রেখেছেন রিজভী ও বকুল; যেন বর্তমান কমিটির কেউ প্রার্থী না হতে পারেন। কারণ, তাদের দুই প্রার্থীর মধ্যে মেহেদী (২০০০) ও হাফিজুর রহমান (২০০১) সালে এসএসসি পাস করেছেন। যদিও মেহেদী বিবাহিত বলে অভিযোগ রয়েছে।

আমান উল্লাহ আমান গ্রুপের থাকা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রিয়.কম বলেন, ‘ছাত্রদলের কমিটিকে কেন্দ্র করে সাবেক ছাত্রনেতাদের গ্রুপিং বিষয়টা অবান্তর। মতবিরোধ থাকতেই পারে। তা ছাড়া কোনো কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে মতবিরোধ থাকা দোষের কিছু নয়। আমাদের মাঝে কোনো গ্রুপিং নাই। কাজেই ছাত্রদলের নতুন কমিটির জন্য যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হবে তাকেই সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া হবে।’ 

জানতে চাইলে রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপের নেতা ও স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় সার্চ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে আলাদাভাবে কোনো পরামর্শ দেওয়া সুযোগ ছিল না। বিএনপি থেকে ছাত্রদলের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কোনো গ্রুপ নেই। যারা ছাত্রদলের আগামী কমিটির জন্য প্রার্থী হবেন, তারা সবাই দলের প্রার্থী।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, ‘রুহুল কবির রিজভী নেতৃত্বাধীন গ্রুপের নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের বাড়ি খুলনায়। তার এলাকায় হাফিজুর রহমানের বাড়িও। এ কারণে তিনি চান ছাত্রদলের আগামী কমিটিতে হাফিজুর রহমানকে নেতা করতে। তারেক রহমানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে ছাত্রদল নিয়ে অনেক বিষয়ে ভুল বোঝাচ্ছেন তিনি।’

বিএনপির অপর একটি অংশের অভিযোগ, গত ১১ জুন থেকে বয়সসীমা না করে ছাত্রদলের ধারাবাহিক কমিটি গঠনের দাবিতে সদ্য বিলুপ্ত ছাত্রদলের কমিটির নেতাদের আন্দোলনে আমানউল্লাহ গ্রুপের উসকানি রয়েছে। তাদের আন্দোলনকে পুঁজি করে রুহুল কবির রিজভীকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকেও বের করতে চান তারা। এজন্য তারা ১১ জুন বিএনপির কার্যালয়ে তালা দিয়ে ভবনের পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। অসুস্থ রিজভীকে বের করতে অ্যাম্বুলেন্সও নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত কার্যালয় থেকে বের হননি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, ছাত্রদলের সবার সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করাসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। বিষয়গুলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও জানেন। এখন বাকি যে কাজ তা সাবেক ছাত্রনেতাদের (সার্চ কমিটির)।

এদিকে সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির (ছাত্রদল) সহসভাপতি এজমুল হোসেন পাইলট প্রিয়.কমকে বলেন, ‘ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির নেতাদের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি করে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। ছাত্রদলের সাবেক নেতারা পরামর্শ দিতে পারেন কিন্তু কমিটি বিলুপ্ত করে তাদের অধীনে নতুন কমিটি নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারে না। এটা সংগঠনের নিয়ম ও রীতিনীতি বিরোধী। কারণ সাবেক ছাত্রনেতা প্রায় সকলেই মূল দল বিএনপি ও অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন, কাজেই তারা তাদের বলয় তৈরিতে সিন্ডিকেটের আশ্রয় নেবেন এটা খুবেই স্বাভাবিক ঘটনা। তাদের মধ্যে কোনো স্বচ্ছতা থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সকল বিষয় অবহিত করেছি। এখন উনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি, উনার সিদ্ধান্তের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা থাকলেও সাবেক ছাত্রনেতাদের প্রতি কোনো বিশ্বাস, আস্থা নেই। তারা প্রত্যেকে নিজেরটা ভালো বুঝেন। আমাদেরকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আমরা মেনেছি। এখন দেখি তারা কী সিদ্ধান্ত নেন। তবে সংগঠনের সংবিধানবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড মেনে নেব না, প্রয়োজনে ফের দাবি আদায়ে আন্দোলনে যাব।’

ছাত্রদলের নেতৃত্ব খুজে বের করতে গঠিত কমিটি সমূহ

নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত মার্চ মাসে ছাত্রদলের কমিটি করতে সাবেক ছাত্রনেতাদের দিয়ে একটি সার্চ কমিটি করে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সার্চ কমিটির নেতারা হলেন—বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান।’

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন−বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, নির্বাহী সদস্য রাজীব আহসান।

বাছাই কমিটিতে আছেন−বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান।

বাছাইয়ের পর সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধান করতে কাজ করবে আপিল কমিটি। এতে সদস্য হিসেবে আছেন−বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান।

ছাত্রদলের কাউন্সিলের ইতিহাস

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় দফতর সূত্র মতে, ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি সংগঠনের প্রতিষ্ঠার পর গত ৪০ বছরে ১৮টি কমিটি হয়েছে। ১৯৭৯ সালে প্রথমে মরহুম কাজী আসাদুজ্জামানকে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি হয়। ওই বছরেই কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রথম কমিটি নির্বাচিত হয়। এতে এনামুল করিম সভাপতি ও আ ক ম গোলাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি হয় ১৯৯২ সালে। কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে রুহুল কবির রিজভী ও ইলিয়াস আলী। এ কমিটি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুনের ঘটনা ঘটে। এরপরই কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। তখন বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায়। পরের বছর ১৯৯৩ সালে ফজলুল হক মিলনকে সভাপতি ও নাজিম উদ্দিন আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। সেই থেকে ছাত্রদলের অনির্বাচিত কমিটির যাত্রা শুরু। সর্বশেষ রাজীব আহসান-আকরামুল হাসান কমিটি পর্যন্ত ১০টি কমিটিই ছিল অনির্বাচিত। এবার ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩ জুন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসন্ন কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার জন্য তিনটি যোগ্যতা নির্ধারণী শর্ত দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, প্রার্থীকে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে, তাকে অবশ্যই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে হবে এবং ২০০০ সালের পরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কাউন্সিলের তফসিলও ঘোষণা হয়। কিন্তু এ নিয়ে বিলুপ্ত কমিটির একটি অংশ আন্দোলন করতে থাকে। একপর্যায়ে ১২ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।

প্রিয় সংবাদ/কামরুল 

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...