মালামাল পরিবহনে ট্রাক। ছবি: প্রিয়.কম

‘পরিবহন সংকট’ বিপাকে ফেলছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সব ব্যবসায়ীই তাদের মালামাল পরিবহনে কিছু-না-কিছু সমস্যায় পড়ে থাকেন। তবে এ সংক্রান্ত সমস্যায় বেশি ভোগেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

রাকিবুল হাসান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৪৬ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০৪
প্রকাশিত: ০৮ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৪৬ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০৪


মালামাল পরিবহনে ট্রাক। ছবি: প্রিয়.কম

(প্রিয়.কম) দেশে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছেন। ভালো কিছু করার প্রয়াস থাকলেও মাঝেমধ্যেই থমকে দাঁড়াতে হচ্ছে দেশের এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। এসব উদ্যোক্তার মধ্যে যারা এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির চিন্তা করেন, তারাই মূলত সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাই অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি তাদের মালামাল পরিবহনে হাঁসফাঁস করতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সব ব্যবসায়ীই তাদের মালামাল পরিবহনে কিছু-না-কিছু সমস্যায় পড়ে থাকেন। তবে এ সংক্রান্ত সমস্যায় বেশি ভোগেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।

চেনা-জানা পরিবহন মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন এই উদ্যোক্তারা। কিন্তু প্রয়োজনের সময় পরিবহন পেতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। সেই সঙ্গে তো বাড়তি ভাড়া রয়েছেই। শুধু তা-ই নয়, মালামাল সময়মতো পৌঁছানো এবং মালামাল খোয়ানোর ভয়ও কাজ করে তাদের মধ্যে।

কেস স্টাডি ১

শান্তা হক একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকে ঢাকা থেকে মেয়েদের কাপড় এনে গাইবান্ধায় বিক্রি করতেন। ক্রেতা ছিল তার কলেজের বান্ধবীরা। অল্প দামে ঢাকা থেকে কাপড় কিনে কিছুটা লাভে বিক্রি করতেন তিনি। প্রথম দিকে ঢাকা থেকে গাইবান্ধাগামী বাস বা কুরিয়ারই ছিল তার ভরসা। তবে এখন বেড়েছে তার ব্যবসার পরিধি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তার কাছ থেকে কাপড় কিনে বিক্রি করেন। আর ক্রেতা বেড়ে যাওয়ায় কুরিয়ারের মাধ্যমে কাপড় নিয়ে আসায় খরচও বেড়েছে তার। এদিকে ট্রাক স্ট্যান্ডে গিয়ে ট্রাক ভাড়া করে মালামাল নিয়ে আসবেন, সে সঙ্গতিও নেই তার। কারণ তাতে খরচ বেড়ে যায়। ফলে তিনি এখন পরিবহন নিয়ে পড়েছেন সংকটে।

কেস স্টাডি ২

ঢাকার বাড্ডায় একটি ছোট কারখানায় প্যাকেজিং মেশিন তৈরি করেন হোসেন শেখ। প্রতি মাসেই বিভিন্ন জেলার খাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে তার প্যাকেজিং মেশিন সরবারহ করতে হয়। একেক সময় একেক জেলায় ট্রাক পাঠাতে হয় বলে দাম যাচাই করা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু কিছু বিক্রিতে দেখা যায়, লাভের গুড় পিঁপড়ায় খাচ্ছে।

কেস স্টাডি ৩

টাঙ্গাইল থেকে তাঁতের শাড়ি এনে ঢাকায় ব্যবসা করেন মুসিব জামান। প্রায়ই তাকে ট্রাকে করে টাঙ্গাইল থেকে বড় ধরনের চালান নিয়ে আসতে হয়। স্থানীয় ট্রাকে করে ঢাকায় মাল নিয়ে আসতে বাড়তি অর্থ গুনতে হয় তাকে। এ ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে তার খরচ একটু কম হয়, যখন ঢাকা থেকে কোনো ট্রাক টাঙ্গাইলে যায় এবং ফিরতি পণ্য নিয়ে ঢাকায় আসে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এমন ট্রাক পাওয়াই বেশ মুশকিল। ফলে তাকে পরিবহন সংকটে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।

মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক। ছবি: প্রিয়.কম

শান্তা হক, হোসেন শেখ ও মুসিব জামানসহ মোট পাঁচজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পণ্য স্থানান্তরে সঠিক সময়ে পরিবহন ব্যবস্থার সংকটের পাশাপাশি তারা আরও কয়েকটি সমস্যায় পড়ে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে—

১। পণ্য কখন পৌঁছাবে বা সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারবেন কি না।

২। পণ্য নিয়ে আসা যানবাহনটি এখন কোথায় অবস্থান করছে তা সার্বক্ষণিক জানতে চালকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা।

৩। পণ্য পরিবহনে দালালদের খপ্পরে পড়া।

৪। নিয়মিত ভাড়ার ওঠা-নামা এবং ট্রাক চালকের অস্বাভাবিক ভাড়া দাবি করা।

৫। সময়মতো ট্রাক বা পণ্য পরিবহনের যান না পাওয়া।

৬। ট্রাক খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময়ের অপচয়।

৭। চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি না পাওয়া। যেমন—হয়তো কাভার্ড ট্রাক চাওয়া হয়েছিল কিন্তু পাঠানো হয়েছে খোলা ট্রাক ইত্যাদি।

এদিকে রাজধানী ও কয়েকটি বিভাগীয় শহরে মানুষের যাতায়াতে ব্যবহার হচ্ছে অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সার্ভিস। এর মধ্যে পাঠাও, ওভাই, উবার অন্যতম। এই অ্যাপ হাতের নাগালে পৌঁছে দিচ্ছে খাবার, মিস্ত্রি, দূরপাল্লার যানবাহনের টিকেট। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পরিবহন সংকটেও কাজ করে যাচ্ছে এমন কয়েকটি অ্যাপ। এসব অ্যাপ উদ্যোক্তাদের পরিবহন সংকট নিরসনের পাশাপাশি মালামালবাহী পরিবহনটির অবস্থান জানার সুযোগ করে দিচ্ছে।

দেশে মালামাল পরিবহনে যতগুলো অ্যাপ রয়েছে এর মধ্যে সুপরিচিত এবং অন্যতম ‘ট্রাক লাগবে’ অ্যাপটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পরিবহন সমস্যা সমাধানে কাজ করছে দেশের এই স্টার্টআপটি। পরিবহন সমস্যার কথা মাথায় রেখে ঘরে বসেই ট্রাক খোঁজা আর দর-কষাকষির ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে দেশীয় অ্যাপভিত্তিক এই পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ ঘরে বসে অ্যাপের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের ট্রাকের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে ‘ট্রাক লাগবে’।

ট্রাক লাগবের লোগো

অ্যাপটি ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন এমন একজন ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম। তিনি চট্টগ্রাম থেকে রাজশাহীতে ডাক্তারি যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে থাকেন। তিনি প্রিয়.কমকে বলেন, ‘এখন ট্রাক লাগবে অ্যাপের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা হাতের নাগালে চলে এসেছে। ধরুন আমার এখন একটি ট্রাক দরকার, আমি অ্যাপসের মাধ্যমে রিকোয়েস্ট পাঠালাম। কিছুক্ষণ পরেই হয়তো রেসপন্স করল। এখন ভাড়ার বিষয়ে ব্যাটে-বলে মিলে গেলেই আমি ট্রাক ভাড়া করে নিতে পারি। ডেফিনেটলি সুবিধা পাচ্ছি এই অ্যাপের মাধ্যমে।’

এ বিষয়ে ‘ট্রাক লাগবে’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনায়েত রশিদ বলেন, ‘মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে “ট্রাক লাগবে” প্ল্যাটফর্ম। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচলিত মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থার ব্যয়ভার বহন করলেও মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ছোট বা বড় যেকোনো ব্যয়ই ব্যবসা পরিচালনায় প্রভাব ফেলে। তাদের সমস্যার কথা মাথায় রেখেই “ট্রাক লাগবে” নেটওয়ার্ক সাজানো হয়েছে। এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের বাজেট অনুযায়ী উপযুক্ত ট্রাক ভাড়া করতে পারেন।’

ঢাকার রাস্তায় ‘ট্রাক লাগবে’ স্টিকারসংবলিত ট্রাক। ছবি: প্রিয়.কম

এনায়েত রশিদ আরও জানান, দেশজুড়ে ব্যবসায়ীদের ট্রাক ভাড়ার সুবিধা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপটি ব্যবহার করে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সহজেই যে কেউ ট্রাক ভাড়া করতে পারবেন। ট্রাক অপারেটররাও অ্যাপটি ব্যবহার করে ফিরতি পথে নতুন ভাড়া পেতে সক্ষম হচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ২৫টি গাড়ি দিয়ে গত বছরের জুলাইয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশি অ্যাপভিত্তিক ট্রাকসেবা ‘ট্রাক লাগবে’। বর্তমানে এ প্লাটফর্মটিতে যুক্ত হয়েছে আট হাজারের বেশি ট্রাক। দিন দিন বাজার বাড়ছে এই স্টার্টআপটির।

‘ট্রাক লাগবে’র বিষয়ে বিস্তারিত জানতে অথবা ট্রাক ভাড়া করাসহ যেকোনো প্রয়োজনে ০১৯৩৯১০০১০০ নম্বরে কল করে কাস্টমার কেয়ারের সহযোগিতা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া গুগল-প্লে স্টোর থেকে নামানো যাবে ‘ট্রাক লাগবে’ অ্যাপটি।

অ্যাপটি এই লিঙ্কে ক্লিক করে ডাউনলোড করা যাবে।

প্রিয় প্রযুক্তি/আজাদ চৌধুরী

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...